১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। প্রথমবারের জন্য মহাশূন্য হাতের মুঠোয় এসেছিল মানব সভ্যতার। নেপথ্যে ছিলেন সোভিয়েত নভশ্চর ইউরি গ্যাগারিন। প্রথম মানুষ হিসাবে তিনিই ‘পা’ রেখেছিলেন মহাকাশে। পরবর্তীতে তাঁকে সম্মান জানিয়েই তাঁর নামাঙ্কিত বিশেষ তহবিল গড়ে তুলেছিল স্পেস ফাউন্ডেশন (Space Foundation)। এবার ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিবাদস্বরূপ সেই প্রকল্প থেকে ইউরি গ্যাগারিনের (Yuri Gagarin) নাম সরিয়ে ফেলল অলাভজনক মহাকাশ অ্যাডভোকেসি সংস্থাটি।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে ইউক্রেনে অতর্কিতেই আক্রমণ চালায় রাশিয়া। তারপর টানা তিন সপ্তাহ ধরেই চলছে প্রাণঘাতী যুদ্ধ। মারা গেছেন বহু নাগরিক। গৃহহীন প্রায় ১৯ লক্ষের বেশি মানুষ। এর মাঝে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকা-সহ একাধিক প্রথম বিশ্বের দেশ ও সংগঠন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করলেও, তাতে বদল আসেনি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। তবে রাশিয়াকে অর্থনৈতিক দিক থেকে কোণঠাসা করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলি। ছিন্ন করছে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এক ঘরে করা হয়েছে খেলা, বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক জগতে। এবার তার রেশ পড়ল মহাকাশেও।
সম্প্রতি, ‘ফিউচারিজম’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে স্পেস ফাউন্ডেশন পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে ‘সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনাবলী’-র নিরিখে ইউরি গ্যাগারিনের নাম সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তহবিল থেকে। পাশাপাশি ৩৭তম স্পেস সিম্পোজিয়াম সম্মেলনের নামও ‘ইউরি’স নাইট’ থেকে পরিবর্তন করে ‘এ সেলিব্রেশন অফ স্পেস’ রাখা হয়েছে।
তবে স্পেস ফাউন্ডেশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। ইউরি গ্যাগারিন ছিলেন সোভিয়েত নভশ্চর। রাশিয়ার ভেঙে যাওয়া সোভিয়েতের সর্ববৃহৎ অংশ হলেও, সম্পূর্ণ পৃথক একটি রাষ্ট্র। পাশাপাশি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশের পরেও ইউক্রেন চিরকালই বিশেষ সম্মান জানিয়ে এসেছে কিংবদন্তি নভশ্চরকে। তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে ইউক্রেনের স্টেডিয়ামের নাম। তাছাড়াও ২০১৩ সালে গ্যাগারিনের মৃত্যুর পর বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠানও আয়োজন করেছিল ইউক্রেন। ফলে, সাম্প্রতিক যুদ্ধপরিস্থিতির নিরিখে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব প্রতি অযৌক্তিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি স্পেস ফাউন্ডেশন।
Powered by Froala Editor