নীলগ্রহে মহাসাগরের সংখ্যা চার— এমনটাই শিখে বড়ো হয়েছে সকলে। কিন্তু এবার বদলে গেল পৃথিবীর মানচিত্র। বাড়ল গেল মহাসাগরের সংখ্যা। প্রশান্ত, আটলান্টিক, ভারত ও সুমেরু মহাসাগরের বাইরে এবার পঞ্চম মহাসাগর হিসাবে স্বীকৃতি পেল দক্ষিণ মহাসাগর। গত ৮ জুন, বিশ্ব মহাসাগর দিবসের দিনই এমন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের কার্টোগ্রাফাররা।
তবে দক্ষিণ মহাসাগরকে পৃথক মহাসাগরের স্বীকৃতি প্রদানের ব্যাপারে বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। ২০০০ সালে প্রথম এই প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। তবে বিশ্বের সব দেশ রাজি ছিল না এই ভৌগোলিক মানচিত্র পরিবর্তনের পক্ষে। ফলত, ইন্টারন্যাশনাল হাইড্রোগ্রাফিক অর্গানাইজেশনে বিষয়টি আলোচনার স্তরেই থেকে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রকৃতিকে বাঁচাতে এবার সেই পথেই হাঁটলেন বিজ্ঞানীরা।
মূলত আন্টার্কটিকার উপকূল থেকে ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশের জলরাশিকেই চিহ্নিত করা হয়েছে দক্ষিণ মহাসাগর হিসাবে। এতদিন পর্যন্ত এই অংশটিকে প্রশান্ত, আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের অংশ হিসাবেই ধরে নেওয়া হত। কারণ, মূলত এই তিনটি মহাসাগরের জলরাশিই ৬০ ডিগ্রি অক্ষাংশে কেন্দ্রীভূত হয়ে সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি করে। প্রায় ৩৪ কোটি বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আন্টার্কটিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর জন্ম হয়েছে এই সমুদ্রস্রোতের। এই তিন মহাসাগরের জলের মাধ্যমেই দক্ষিণ মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত তৈরি হলেও, তাতে চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই জলরাশির উষ্ণতা যেমন কম, তেমনই তাতে লবণের পরিমাণও অল্প।
তবে ক্রমাগত জলাবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে বদলে যাচ্ছে তার চরিত্রও। দক্ষিণ মেরু ও মেরু-সংলগ্ন অঞ্চলে বসবাস করে তিমি, ডলফিন, পেঙ্গুইন, সিল-সহ একাধিক প্রাণী। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই বাস্তুতন্ত্রও। কাজেই এই জলরাশির যে বিশেষ সংরক্ষণের প্রয়োজন— এই বিষয়টিতেই বিশেষ জোর দিচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর পরিকল্পনামাফিক সংরক্ষণ কর্মসূচি নেওয়ার জন্য দক্ষিণ মহাসাগরকে পৃথক স্বীকৃতি দেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছিল বলেই অভিমত তাঁদের। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, আইএইচও এনওএএ-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ৮ তারিখ সেই স্বীকৃতি জুটল দক্ষিণ মহাসাগরের।
আরও পড়ুন
পৃথিবীর ‘একমাত্র’ বাদ্যযন্ত্রী পাখি, বসবাস ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
পশ্চিম ভারত মহাসাগরে আবিষ্কৃত নীল তিমির বাসস্থান, উচ্ছ্বসিত গবেষকরা