কিছুদিন আগেই, মনের যাবতীয় দ্বন্দ্ব ঘোচাতে নেদারল্যান্ডসের এক বিশ্ববিদ্যালয় শুদ্ধিকরণ কবরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল। এবার সামনে এল অন্য আরও এক অভিনব পন্থা। দক্ষিণ কোরিয়ায় ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে জীবিতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। প্রতিটি মানুষ জীবন ভাবনা, দর্শনটুকুর ফারাক নিজেই নাকি মেপে নিতে পারবে এই প্রক্রিয়ায়। আয়োজক সংস্থাটির নাম ‘হাইওউন হিলিং সেন্টার’। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলে অবস্থিত এটি ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে বিশ্বে।
ইন্টারনেট ঘাটলে দেখা যায়, স্পষ্ট লেখা আছে সিওলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কেন্দ্র। কিন্তু এটুকু থেকে কীভাবে বোঝা যাবে, এক তাবড় বিস্ময় লুকিয়ে আছে সেখানে? ২০১২ সালে এই হিলিং সেন্টার শুরু হলেও আদতে কীভাবে জীবিতদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্ভব? কেনই বা প্রয়োজন? তা ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে সকলে। এই সেবা কোনো মৃত ব্যক্তিদের জন্য নয়, শুধুমাত্র জীবিতদের জন্যই। জীবনের মানে হারিয়ে ফেলা মানুষেরা কিছু ফিরে পাবার আশায় আসে এখানে। আসে বেঁচে থাকার অন্য মানে খুঁজতে। এখানে আসা প্রত্যেকেই তাদের জীবনের শেষ ইচ্ছেটুকু লিখে রাখে প্রথমে। কাফনের এক টুকরো কাপড় গায়ে জড়িয়ে প্রায় ১০ মিনিট বন্ধ কফিনের ভেতর নিজের সঙ্গে কাটায় প্রত্যেকে। কোনো বয়স এখানে বাধা নয়, আট থেকে আশি বাদ নেই কেউই।
এখনও পর্যন্ত ২৫ হাজার মানুষ এই অন্ত্যেষ্টি যজ্ঞে অংশ নিয়ে ফিরে পেয়েছেন হারানো মনোবল। এক কোরিয়ান প্রৌঢ় এমনও বলেন, জীবন ও মৃত্যুর উপলব্ধির জন্যও এই কফিনে শুয়ে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু গোটা কোরিয়া অর্থনৈতিক মন্দা ও বেকারত্বে জেরবার, সেখানে প্রচুর উজ্জ্বল তরুণ-তরুণীরা হতাশায় ভেঙে পড়ছেন। দ্বারস্থ হচ্ছেন এই সেন্টারের। তেমনই এক ২৮ বছরের চোই জিন কিও। চাকরির স্বপ্ন দেখতেন একদিন। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে গিয়ে এখানে এসেছিলেন। জিন-কিও ফিরেছেন এক নতুন স্বপ্নের দিশা নিয়ে।
প্রত্যেকটি জীবনের ভিতর যে আনন্দ ও ইচ্ছের মেলবন্ধনটুকু বেঁচে আছে, তাকেই মর্যাদা দিচ্ছে হাইওউন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কেন্দ্র, জানালেন সংস্থার প্রধান জং ইয়ং মুন।
ত্যুর আধারের ভেতরও লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের আলো, এক শান্তিপূর্ণ জীবনদর্শন সর্বোপরি এক ভালো থাকার পাসওয়ার্ড। সত্যি অবাক হতে হয় এই খবর জানলে।