ক্রমবর্ধমান হারে হারিয়ে যাচ্ছে ক্রান্তীয় অরণ্য। এমনকি বিগত দুই দশকে এক-তৃতীয়াংশ বনভূমির অস্তিত্বই মুছে গেছে দক্ষিণ এশিয়া থেকে। আর যার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা এশিয়ার ওপর। সম্প্রতি এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল গবেষণায়।
একুশ শতকে বৃক্ষচ্ছেদনের হার নিয়ে সম্প্রতি এই গবেষণা করেছিলেন সাদার্ন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষকরা। গত ২৮ জুন সেই গবেষণাপত্র প্রকাশ পায় ‘নেচার’ বিজ্ঞান পত্রিকায়। একাধিক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বনভূমির সংগৃহীত ছবির ওপর ভিত্তি করেই এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন তাঁরা। পৃথক পৃথকভাবে সেখানে দেখানো হয় প্রতি বছরে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণকে।
মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড-সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে বনভূমি নিধনের ছবি উঠে এসেছে বারবার। পাম চাষের জন্য সেখানে ছেঁটে ফেলা হয়েছে মাইলের পর মাইল বনভূমি। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় ধরা পড়ল অন্য চিত্র। সাধারণত কৃষি বা নির্মাণের কারণে সমতলের বনভূমিই বৃক্ষচ্ছেদনের কোপে পড়ে। তবে বর্তমানে সমান হারে ছাঁটাই চলছে পার্বত্য অঞ্চলের অরণ্যেরও। যা বিশেষভাবে চিন্তিত করে তুলেছে গবেষকদের।
সাসটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক চুনমিয়াং জেং-এর কথায়, পার্বত্য অঞ্চলের বনভূমি লোপ পাওয়ার এই ঘটনাই শমন হয়ে দাঁড়াতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার কাছে। তাঁর মতে, পার্বত্য অঞ্চলের প্রাচীন বনভূমি কার্বনের উল্লেখযোগ্য আধার। ফলত, দ্রুত হারে এই বনভূমির হ্রাস গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কার্বন নির্গমনের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর যে ক্ষতি আক্ষরিক অর্থেই অপূরণীয়।
আরও পড়ুন
উপড়ানো গাছ পুনর্বাসনের জন্য ‘কাঁধে’ তুলে নিলেন গ্রামবাসীরাই!
সাসটেকের গবেষকরা জানাচ্ছেন, সমভূমিতে বৃক্ষরোপণের সুযোগ থাকলেও পাহাড়ের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। প্রথমত তার প্রধান কারণ হল পার্বত্য অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ সহজসাধ্য প্রক্রিয়া নয়। তা ব্যয়বহুলও বটে। পাশাপাশি, যে কোনো গাছের চারা পার্বত্য মাটিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেও অক্ষম। কাজেই হারিয়ে যেতে বসা এই ক্রান্তীয় অরণ্যকে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা এক কথায় অসম্ভব।
আরও পড়ুন
গাছতলায় ‘মুঘল-এ-আজম’এর গান রেকর্ড; গানের পুস্তিকা লিখেছেন শার্লক হোমসও!
তবে শুধু আবহাওয়া পরিবর্তনই নয়, বনভূমি ধ্বংসের কারণে বন্যা, ভূমিক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক সমস্যাগুলি আগামীদিনে আরও প্রকট হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়ায়। সেইসঙ্গে জীববৈচিত্রও বিপন্ন হতে চলেছে লাওস, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমারের মতো দেশগুলিতে। তার ফলে আর্থিক দিক থেকেও ধাক্কা খেতে পারে স্থানীয় মানুষজন। ভূমিব্যবস্থাপনা এবং পার্বত্য অরণ্যের সংরক্ষণে যাতে এই মুহূর্তে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় সংশ্লিষ্ট দেশগুলির প্রশাসন, সেই আর্জিই জানাচ্ছেন গবেষকরা…
আরও পড়ুন
গাছের পাতা থেকেই স্যানিটাইজার! আশ্চর্য দাবি উত্তরবঙ্গের গ্রামের!
Powered by Froala Editor