চাকরি ছেড়ে শিশু ও মহিলাদের জন্য লড়ছেন সাংবাদিকা

মোটা অঙ্কের চাকরি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে সুখকর কাজ— সব কিছুই ছিল তাঁর কাছে। তবে এসবের পরেও রাস্তায় নেমে সাধারণ মানুষের জন্য ঘাম ঝরানোর পথটাই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কথা হচ্ছে মানবাধিকার কর্মী সোনালি খানকে  (Sonali Khan) নিয়ে। শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, মহিলা অধিকার, এইডসের মতো বিষয় নিয়ে বিগত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম কাজ করে চলেছেন ভারতের এই প্রাক্তন সাংবাদিকা (Journalist)। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও একরকম নেশার জেরেই সংবাদ মাধ্যমের দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছিলেন সোনালি। সেটা নব্বইয়ের দশকের শুরু দিক। তবে একদম আনকোরা এই দুনিয়ায় জুত করে উঠতে তাঁর সময় লাগেনি খুব একটা। সমাজকর্মী হিসাবে আত্মপ্রকাশ তারও প্রায় এক দশক পরে। খানিকটা আকস্মিকভাবেই। সন্তান হওয়ার পর বাধ্য হয়ে অফিসের কাজ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। সেসময় ফ্রিলান্সিং সাংবাদকর্মী হিসাবে কাজ করলেও, পরবর্তীতে আর মিডিয়াজগতে ফেরা হয়নি তাঁর। বিকল্প চাকরি খুঁজতে গিয়েই তিনি যোগ দিয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্রিয়া’-র দপ্তরে। 

সেই সংস্থার হয়ে কাজ করতে গিয়েই ভারতের বাস্তব পরিস্থিতির ছবি ভেসে ওঠে তাঁর চোখের সামনে। তারপরই নিজের কাজের ধরন বদলে ফেলেন সোনালি। পেশাগতভাবে সেই সংস্থার প্রযুক্তিবিদ হলেও, সোনালি কলম ধরেন নারী অধিকারকর্মী হিসাবে। শুরু হয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। ‘ক্রিয়া’-র পর খ্যাতনামা নারী অধিকার সংস্থা ‘ব্রেকথ্রু ইন্ডিয়া’-তে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি। আয়োজন করেছেন অসংখ্য সচেতনতামূলক প্রচারসভা। বাল্যবিবাহ, গার্হস্থ্য হিংসা, যৌন হয়রানি ছাড়াও একাধিক বিষয় নিয়ে মাঠে নেমে কাজ করেছেন সামনের সারির যোদ্ধা হয়ে। 

বর্তমানে মার্কিন সংস্থা ‘সেসেম ওয়ার্কশপ’-এর ভারতীয় দপ্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনিই। জনপ্রিয় ‘গলি গলি সিম সিম’ অনুষ্ঠানটির পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট কার্টুন টেলিভিশন শোটির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি শিশু। প্রাথমিকস্তরের শিশুশিক্ষা ও পাঠ্যকে টেলি-মিডিয়ার মাধ্যমে সাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগের গুরুত্ব এককথায় অপরিসীম।

তবে এখানেই থেমে নেই সোনালি। ভারতের সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করাই এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যেই মহিলা ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে চলেছেন প্রান্তিক অঞ্চলে। সেইসঙ্গে শিশুশিক্ষা প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন সোনালি। তাঁর মানবাধিকার আন্দোলনে আজ সামিল হয়েছে আরও লক্ষ লক্ষ মহিলা। তাঁদের অনুপ্রেরণা তিনিই। এভাবেই যেন স্বতন্ত্র, স্বনির্ভর এবং স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভারতের প্রাক্তন সাংবাদিকা… 

Powered by Froala Editor