সাল ১৮০০। নির্বাচন চলছে আমেরিকায়। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যারন বার এবং থমাস জেফারসন। তৃতীয়বার কে রাষ্ট্রপতির সিংহাসনে বসবেন, জানার জন্য উৎসুক দেশ। নির্দিষ্ট দিনে ফলাফল সামনে এল। এ কী! দুজনেই যে সমান সংখ্যক ভোট পেয়েছেন! এবার রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তার বিচার কী করে হবে? এমন সময় হাজির হলেন আমেরিকার প্রথম ট্রেজার সেক্রেটারি, আলেকজান্ডার হ্যামিলটন। অদ্ভুত কৌশল নিয়ে, সমস্ত জায়গায় গিয়ে থমাস জেফারসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন করতে লাগলেন। অ্যারন বার একজন স্বার্থপর, তাঁকে কেনই বা ভোট দেবেন আপনারা? শেষ পর্যন্ত এই উপায় সফল হন তিনি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন থমাস জেফারসন। আর অ্যারন বার? এই সবকিছুই যে হ্যামিলটনের কারসাজি, তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। নির্বাচনের চার বছর পর, ১৮০৪ সালে হ্যামিলটনকে ডুয়েলের আহ্বান করলেন। হাডসন নদীর ধারে সুযোগ বুঝে সেই ডুয়েলেই ‘শত্রু’ আলেকজান্ডার হ্যামিলটনকে মেরে ফেললেন অ্যারন…
এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলছে আরও একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মরসুম। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের দুই প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বিডেন। কে জিতবে, কেমন হবে ভবিষ্যতের ছবি— সমস্ত কিছুর দিকেই তাকিয়ে আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্ব। আর এই নির্বাচন ঘিরেই একসময় উঠে এসেছে বহু ঘটনা। ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল আসার আগে অবধি, এমনকি তার পরও চলেছে ঠোকাঠুকি। কখনও রক্ত ঝরেছে, কখনও উঠে এসেছে কেচ্ছার খবর…
১৮২৪ সাল। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন জন অ্যাডামস এবং অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। এঁদের সঙ্গেই ছিলেন আরও একজন, হাউজ স্পিকার হেনরি ক্লে। ভোট হয়ে যাওয়ার পরও দেখা গেল, কেউই ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারেননি। এবার কী হবে? জ্যাকসন তো নিশ্চিন্তে। পপুলার ভোট এবং ইলেক্টোরাল কলেজের সমর্থন রয়েছে তাঁর দিকে। তাই, ১৮২৫-এ কনটিনজেন্ট নির্বাচনে যে তিনিই জিতবেন, সেটা ছিল একপ্রকার নিশ্চিত। কিন্তু আসল সময় দেখা গেল উল্টো ঘটনা। হাউজ স্পিকার হেনরি ক্লে এবং তাঁর সমর্থকদের অধিকাংশই হঠাৎ করে চলে গেল জন অ্যাডামসের দিকে। দিনের শেষে সংখ্যাগুরু হওয়ায় ষষ্ঠ প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হলেন জন অ্যাডামস। এই ঘটনা কিছুতেই মানতে পারেননি অ্যান্ড্রু জ্যাকসন। সেইবারের নির্বাচনকে ‘ভুয়ো’ এবং ‘দুর্নীতিপূর্ণ’ বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পরের বার সগৌরবে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন তিনি। ১৮২৮ সালে সেটাই করে দেখিয়েছিলেন জ্যাকসন…
১৮৭২ সালে একসঙ্গে অনেক ঘটনা ঘটে আমেরিকায়। প্রথমবার একজন আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্টের নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন ফ্রেডেরিক ডগলাস। এবং এই সময়ই অবৈধভাবে ভোটিং করার জন্য গ্রেফতার হন সুসান অ্যান্থনি। তবে এর থেকেও চমকপ্রদ ছিল প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। একে অন্যের মুখোমুখি ইউলিসিস গ্রান্ট এবং হোরাস গ্রিলি। ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটদান পর্ব তখনও বাকি। এমন সময় খবর এল, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হোরাস গ্রিলি মারা গেছেন। এমন আকস্মিক ঘটনা এর আগে আমেরিকার নির্বাচনে হয়নি। কী করা যাবে? শেষপর্যন্ত ইউলিসিস গ্রান্টই প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনীত হন। এবং সঙ্গে সঙ্গেই গ্রিলির শেষযাত্রায় উপস্থিত হন তিনি।
আরও পড়ুন
ফিদেল কাস্ত্রোকেও সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? কেনেডি হত্যা-রহস্যের কিনারা হয়নি আজও
একটা সময় জেলের ভেতর থেকে নির্বাচন লড়েছেন ইউজিন ডেবস। টানা পাঁচবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু শিকে ছেঁড়েনি একবারও। উল্টে পঞ্চমবার কারাগারের ওপাশ থেকেই পরিচালনা করতে হয় ভোটপর্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন রুজভেল্ট। প্রেসিডেন্ট পদের চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। আর তারপর যিনি এলেন, সেই হ্যারি ট্রুম্যান স্মরণীয় হয়ে থাকলেন ‘পরমাণু বোমা’র জন্য। ১৯৬০ সালে মার্কিন নির্বাচনে যেন নতুন ঝড় উঠল। ততদিনে এসে গেছে টেলিভিশন। এই মাধ্যমকে হাতিয়ার করে প্রথমবার নির্বাচনী প্রচারে নামলেন জন এফ কেনেডি এবং রিচার্ড নিক্সন। আবার গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের পরও উঠেছে রাশিয়ার আঁতাতের অভিযোগ। এইভাবেই ঘটনাবহুল হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যার দিকে গোটা বিশ্বের চোখ থাকে; যে নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে ঠিক হয় রাষ্ট্রের পরবর্তী পরিকল্পনা। এই বছর দেখা যাক, কার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আবার রাজ্যভিত্তিক লকডাউনের পথে যুক্তরাষ্ট্র, স্কুল বন্ধ করায় ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প