টম্যাটো ছুড়ে বরকে স্বাগত জানানোর কথা কখনো শুনেছেন? একে বলে ‘লা টমাটিনা’। উত্তরপ্রদেশের সরসউল শহরে বিয়ের সময় গোলাপের পাপড়ির বদলে টম্যাটো ছুড়ে বরকে স্বাগত জানানো হয়। গুজরাতে রয়েছে দুধ ও মধু দিয়ে বরের পা ধোয়ার রীতি। এর পোশাকি নাম ‘মধুরপর্কা’। এখানেই অন্ত নয়। মিশ্রণটি আবার বরকে পান করানোটাও রেওয়াজ। কি, গা ঘিনঘিন করছে?
যাই হোক, গুজরাতি বিয়েতে বরের নাক টানার এক অনন্য ঐতিহ্যও রয়েছে। একে ‘পঙ্কভু’ বা ‘পোনখানা’ বলা হয়। বরকে স্বাগত জানানোর সময় কনের মা আরতি করেন। এর পর বরের নাক টেনে ধরেন শাশুমা। আদরের ‘বাবাজীবন’ যাতে নম্র এবং কৃতজ্ঞ থাকেন, সেই বিশ্বাস থেকেই এমন রেওয়াজ।
মণিপুরে বর ও কনে পক্ষের মহিলারা একজোড়া টাকি মাছ জলে ফেলে দেন। জোড়া মাছ বর ও কনের প্রতীক। বিশ্বাস, জোড়া মাছ একসঙ্গে সাঁতরালে স্বামী-স্ত্রীও সুখী জীবনযাপন করবেন। বিয়ের সময় বরকে জামা ছিঁড়তে দেখাটা বেশ আশ্চর্যের। কিন্তু এই ঐতিহ্য সিন্ধি সম্প্রদায়ের মানুষ পালন করেন। ‘সাঁথ’ নামে পরিচিত এই রীতি। এখানে বরকে তাঁর ডান পায়ে জুতো পরিয়ে মাথায় তেল মাখানোটাই প্রথা। এরপর ডান পা দিয়ে মাটির পাত্র ভেঙে বরপোশাক ছিঁড়ে ফেলা হয়। পূর্ব-ভারতীয় এক সম্প্রদায়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়রা তার বাড়িতে জড়ো হয় তাঁকে টুথপেস্ট, জুতোর পালিশ এবং এমনকী ডিমের কুসুম মাখাতে। হায়!
বিহারে আবার শ্বশুরবাড়িতে বড় ঝুড়িতে পা রেখে ঘরে প্রবেশ করেন কনে। এই বিহারেই কোনো পরিবারে শাশুড়ি কিছু মাটির হাঁড়ি দিয়ে নববধূকে স্বাগত জানান। কনেকে তাঁর মাথায় হাঁড়ির ভারসাম্য বজায় রেখেই কোনো হাঁড়ি না ভেঙে গুরুজনদের কাছ থেকে পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিতে হয়। উদ্ভট এক বিবাহ ঐতিহ্য উত্তর গোয়ায় গোয়ানরা অনুসরণ করেন। এখানে জুন মাসে সদ্য বিবাহিত বরকে একটি কূপে ফেলে দেওয়া হয়। এই উৎসবটির নাম ‘সাঞ্জাও’। আসামের এক উপজাতীয় অঞ্চলে বর ও কনেকে বিয়ে করার জন্য কেবল শুধু মালা বিনিময় করলেই কেল্লাফতে।
আরও পড়ুন
পরাজিত হলেই বিয়ে! ভারতসেরা কুস্তিগিরকে হারালেন হামিদা বানু, তারপর?
বিয়ে করে কনে যাচ্ছেন শ্বশুরঘর। অথচ নতুন কনের সাজ নেই তেমন। তাঁকে দেখলে মনে হবে, সদ্য স্বামীহারা। ভারতে এমন অনেক ঐতিহ্য রয়েছে, যা অবাক করে। সাতপুরা পাহাড়ের কোলে মধ্যপ্রদেশের মন্ডলা জেলা। এর উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত সুখপ্রদায়িনী নর্মদা। নদীর ওপারে আরও এক জেলা, রেওয়া। জেলারই এক গ্রাম ভীমডংরি। গাঁয়ে গোন্ডি নামক আদিবাসী সমাজের বাস। এই আদিবাসী সম্প্রদায়ে বিয়ে হয় ধুমধাম করে। কিন্তু বিয়ের পর? নববধূ শ্বশুরবাড়ি যান বিধবাবেশে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। ভীমডংরির দেহাতি মানুষ তাঁদের মেয়ে বোনদের সাদা পোশাকে বিদায় জানান।
আরও পড়ুন
বিয়ের আগে নেড়া হতে হয় পাত্রী-কে, বাবা ছিটিয়ে দেন থুতু!
বিয়ের অনুষ্ঠানে সাজসজ্জায় সাধারণত সবার চেয়ে এগিয়ে থাকেন কনে। কিন্তু ভীমডংরির কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে দেখা মিলবে অন্য ছবি। বিয়ের পর কনের লাল জোড়া খুলে দেন খাস তাঁর মা-বাবা। এর পর সাদা কাপড় পরিয়ে তাঁদের মেয়েকে বিদায় দেন। বিয়ে আড়ম্বরে হলেও বিদায়ের সময় প্রথা অনুযায়ী কনেকে কাপড় খুলে সাদা কাপড় পরানো।
কনে বিদায়ের সময় সবাই সাদা পোশাক পরেন। এমন ঐতিহ্যের পিছনে বিশেষ একটি কারণ অবশ্য রয়েছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষ গোন্ডি ধর্ম পালন করেন। সাদা রং এই ধর্মের মানুষের কাছে শান্তির প্রতীক। তাঁদের কাছে পবিত্র সাদা রং। তাই এই সম্প্রদায়ের মানুষ বিবাহে সাদা পোশাক পরাকে শুভ বলে মনে করেন।
অদ্ভুত সব বিবাহরীতি পালনের সঙ্গে কোথাও জড়িয়ে আছে সেই সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। গভীর এক শিকড়ে যুক্ত জীবনযাপনের দীর্ঘ ইতিহাস। সামাজিক নিয়মের পাশাপাশি পালিত হয় সেই অনন্য ঐতিহ্য। যা আসলে অলংকৃত করে তোলে বিবাহের স্বতন্ত্র শৈলীকেও।
Powered by Froala Editor