Powered by Froala Editor
বিশ্বের আশ্চর্য কিছু ফুটবল স্টেডিয়াম, যা হার মানাবে কাতারকেও!
১/১০
যে-কোনো সংবাদমাধ্যমেই বর্তমানে চর্চার শীর্ষে রয়েছে কাতার বিশ্বকাপ। মেসি কি এমবাপে— কার হাতে উঠবে কাপ, তা নিয়েই চলছে তুমুল আলোচনা। অবশ্য বিশ্বকাপ শুরুর এক দশক আগে থেকেই চর্চা শুরু হয় কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। আর তার অন্যতম কারণ ছিল আশ্চর্য সব ফুটবল স্টেডিয়াম। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত দর্শকাসন, ছাদ ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা কিংবা নকশা— প্রতি আঙ্গিকেই চমক লাগিয়েছিল এসব স্টেডিয়ামের নকশা। তবে, শুধু কাতারই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমনই অজস্র ফুটবল গ্রাউন্ড। এক ঝলক দেখে নেওয়া যাক এমনই কিছু আশ্চর্য ফুটবল মাঠের ছবি।
২/১০
স্টাডে লুই ২— ভ্যাটিকান সিটির পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ দেশ মোনাকো। দ্বিতীয় ‘স্টাডে লুই’ সে-দেশের একমাত্র স্টেডিয়াম। উপকূল থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি। ১৯৩৯ সালে ‘এসি মোনাকো’-র হোম স্টেডিয়াম হিসাবে নির্মিত হয়েছিল এই ফুটবল মাঠ। তবে ১৯৮৫ সালে পুরনো কাঠামো ভেঙে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলা হয় স্টাডে লুই-কে। বর্তমানে এই স্টেডিয়াম ব্যবহার করে মোনাকোর জাতীয় দলও।
৩/১০
ভয়ডোভাক স্টেডিয়াম— রুফটপ রেস্তোরাঁয় তো গেছেন অনেকেই। কিন্তু রুফটপ স্টেডিয়ামে বসে যদি ফুটবল দেখার সুযোগ মেলে? হ্যাঁ, ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত শোনালেও সত্যি। সার্বিয়ার বেলগ্রেডে অবস্থিত ভয়ডোভাক স্টেডিয়ামের জাদু এমনই। বিশ্বের একমাত্র রুফটপ স্টেডিয়াম এটিই। বেলগ্রেডের এক শপিং মলের ছাদে অবস্থিত এই ফুটবল গ্রাউন্ডের উচ্চতা মাটি থেকে ৫০ ফুট। দর্শকদের বসার ব্যবস্থা আরও ৩০ ফুট ওপরে। উল্লেখ্য, এই স্টেডিয়ামটিই বেলগ্রেড এফসির হোম স্টেডিয়াম।
৪/১০
ফ্লোট অ্যাট ম্যারিনা বে— বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো এই ভাসমান ফুটবল স্টেডিয়ামটি অবস্থিত সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের ম্যারিনা উপসাগরে ভাসমান প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে গড়ে তোলা হয়েছে এই ফুটবল মাঠ। তবে শুধু ফুটবলই নয়, অন্যান্য খেলার জন্যেও ব্যবহৃত হত এই স্টেডিয়াম। বর্তমানে এখানে সামরিক অভ্যাস করে সিঙ্গাপুরের সেনারা। তবে মজার বিষয় হল, এই মাঠ ভাসমান হলেও, দর্শকাসন ভাসমান নয়। বরং, উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে পৃথকভাবে গড়ে তোলা হয়েছে দর্শকদের গ্যালারি।
৫/১০
এস্টাডিও বিবিভিও— আশ্চর্য গঠন না হলেও, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে বিশ্বের অদ্ভুত স্টেডিয়ামগুলির তালিকায় নিঃসন্দেহে রাখা যায় এস্টাডিও বিবিভিও-কে। মেক্সিকোর নুভ লিওঁ শহরে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি অবস্থিত শহরের মূলকেন্দ্র থেকে বেশ খানিকটা দূরে বন্য পাহাড়ি অঞ্চলে। সেইসঙ্গে গ্যালারিতে বসলে স্টেডিয়ামের ছাদ থেকে দেখা মেলে দূরের সেরা ডে লা সিরা পর্বতশিখর। অবশ্য এই স্টেডিয়াম নির্মাণ নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। প্রকৃতি ধ্বংসের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন পরিবেশবিদরা।
৬/১০
এস্টাডিও ব্রাগা— নাম থেকেই অনুমান করা যায় এই স্টেডিয়ামটির অবস্থান পর্তুগালের ব্রাগা শহরে। সিআর-৭-এর দেশের সপ্তম বৃহত্তম স্টেডিয়াম এটি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এই স্টেডিয়ামে দুই গোলের পিছনেই দর্শকাসন নেই কোনো। বরং, সেখানে রয়েছে খনি। শৈল খাদান করা হয় এই খনি থেকে। মাঠের অন্য দুই প্রান্তে দর্শকদের বসার জায়গা। আর সেই গ্যালারিও বেশ বিস্ময়কর। গ্যালারির নিচে স্তম্ভ নেই কোনো। বরং মাঠের দুপ্রান্তের গ্যালারিদুটি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত লোহার তার দিয়ে। আশ্চর্য এই নকশার জন্য প্রিৎজকার আর্কিটেকচার পুরস্কার পান স্থপতি এদুয়ার্দো মৌরা।
৭/১০
অটমার হিটজফিল্ড অ্যারেনা— সুইজারল্যান্ডের গসপেন শহর। আল্পসের কোলে অবস্থিত ছোট্ট এই শহর বিশ্বখ্যাত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। এই শহরেই রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ফুটবল স্টেডিয়াম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৬৫৬১ ফুট। মজার বিষয় হল, খাদের কিনারে অবস্থিত হওয়ায় কোনো দর্শকাসন নেই এই স্টেডিয়ামে। ঘাসে ঢাকা পাহাড়ের ঢালে বসেই খেলা দেখতে হয় দর্শকদের। পাশাপাশি গাড়ির বদলে এই স্টেডিয়ামে পৌঁছানোর একমাত্র পথ রোপওয়ে। মাঠের চারদিকে গ্যালারি না থাকায়, একসময় প্রতি ম্যাচেই শতাধিক বল হারাত খেলার মাঝে। বর্তমানে এই সমস্যা মেটাতে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু জাল টাঙানো হয়েছে খাদের প্রান্তে। অবশ্য তাতেও এই স্টেডিয়াম থেকে ৪-৫টি করে বল হারায় প্রতি ম্যাচেই।
৮/১০
ইগ্রালিস্তে বেটারিয়া—এবার ফিরে যাওয়া যাক লুকা মডরিচের দেশের। হিটজফিল্ড অ্যারেনার মতোই ক্রোয়েশিয়ার ট্রোগির শহরে অবস্থিত এই ফুটবল মাঠে দর্শকদের জন্য আলাদাভাবে কোনো বড়ো গ্যালারি নেই। মাঠের চারদিকে দাঁড়িয়েই খেলা উপভোগ করতে হয় দর্শকদের। তবে তাতে এতটুকু বিরক্ত হবে না কেউ-ই। কারণ, এই ফুটবল মাঠে দাঁড়িয়ে যে-কোনো দিকে তাকালেই, চোখে পড়বে প্রাচীন সব স্থাপত্য। যাদের বয়স ন্যূনতম ৫০০ বছর। একপ্রান্তে গোলপোস্টের পিছনে রয়েছে কামেরলেঙ্গো দুর্গ, অন্যদিকে সান মার্কো ওয়াচটাওয়ার। আবার সাইডলাইনের দুধারে যথাক্রমে সমুদ্র এবং টাউনহল। ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামকে হেরিটেজ সাইটের তকমা দিয়েছে ইউনেস্কো।
৯/১০
সাভাঙ্গাস্কারে— নীল জলরাশির মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে অজস্র ছোটো বড়ো দ্বীপ। তার মধ্যেই নির্মিত এই স্টেডিয়াম। পাশাপাশি চোখে পড়বে কুয়াশায় ঢাকা দূরের সবুজ পার্বত্য উপত্যকা। সবমিলিয়ে নজরকাড়া দৃশ্য। ডেনমার্কের ফারো আইল্যান্ডের তফতির দ্বীপে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামটি তৈরি হয়েছিল ১৯৮০ সালে। মাত্র ৬ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা থাকলেও, আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য ফিফার অনুমোদন পায় সাভাঙ্গাস্কারে।
১০/১০
আল্পেনসিয়া স্কি অ্যান্ড গলফ রিসর্ট— স্টেডিয়ামের নামে রিসর্ট দেখে ভ্রূ কুঞ্চিত করবেন অনেকেই। আসলে দক্ষিণ কোরিয়ার গ্যাংওয়ান শহরে অবস্থিত এই স্টেডিয়াম শীতকালে সম্পূর্ণ বরফে ঢেকে যায় এই স্টেডিয়াম। আর সেইসময় এখানে স্কিয়িং-এর জন্য হাজির হন হাজার হাজার মানুষ। দুই গোলের পিছনে পাহাড়ের ঢাল অনুযায়ী স্কিয়িং-এর জন্য নততল পথেরও বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে। অন্যদিকে শীত কাটলেই এই স্টেডিয়ামে বসে ফুটবলের আসর। সে-সময় মাঠে বরফ না পড়লেও, গ্যালারিতে বসেই দূর থেকে দেখা যায় তুষারে ঢাকা পাহাড়চূড়া।