Powered by Froala Editor
ফিরে দেখা শেন ওয়ার্ন: ৮ অবিস্মরণীয় মুহূর্ত
১/১০
১৯৯২ সাল ২ জানুয়ারি। ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল এক তরুণ অজি স্পিনারের। না, সেই সিরিজে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। তবে সেটা ছিল যাত্রাপথের সূচনা। পরবর্তী ১৫ বছরে ক্রিকেট জগতে একের পর এক কিংবদন্তি রচনা করেছেন শেন ওয়ার্ন। লিখেছেন নতুন ইতিহাস। যা আজও ভাস্বর হয়ে রয়েছে ক্রিকেটের জগতে। ফিরে দেখা যাক শেন ওয়ার্নের ছোট্ট ক্রিকেট কেরিয়ারের এমনই কিছু ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
২/১০
ওয়েস্টইন্ডিজ টেস্টের আইকনিক ফ্লিপার— টেস্ট ক্রিকেটে ১৯৯২ সালের শুরুতেই ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেক হয়েছিল ওয়ার্নের। ভারতে ১৫০ রান দিয়ে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন ১টি মাত্র উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই দর্শকমহলে দাগ কাটতে পারেনি তাঁর পারফর্মেন্স। তবে ওই একই বছরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জাত চেনান অজি তারকা। তখন দ্বিতীয় ইনিংস চলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৩৫৯ রানের লক্ষ্য। অন্যদিকে ১৪৩ রানে ১ উইকেট হারিয়ে চালকের আসনে ক্যারিবিয়ানরা। এমন সময়ই ঝলসে ওঠেন ওয়ার্ন। আইকনিক ফ্লিপারে আউট করেন অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসনকে। তারপরই তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়ে প্রতিপক্ষের দল। সেই ম্যাচে ৫২ রান দিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ওয়ার্ন। অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ১৩৯ রানে।
৩/১০
‘দ্য বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’— সেটা ১৯৯৩ সাল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম অ্যাশেস টেস্ট খেলতে নেমেছেন ওয়ার্ন। তবে প্রথম বলটাই তিনি পিচ করলেন লেগ স্টামের অনেকটা বাইরে। ক্রিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কিংবদন্তি ব্রিটিশ ব্যাটার মাইক গ্যাটিং। এই বলে ব্যাট ঠেকাবেন না, এমনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন তিনি। তবে মুহূর্তে বদলে গেল দৃশ্যটা। অপ্রত্যাশিত বাঁক নিয়েই সেই বল এসে ছুঁয়ে গেল অফ স্টাম্প। শুধু গ্যাটারই নয়, সেদিন সেই ডেলিভারি দেখে আঁতকে উঠেছিলেন স্বয়ং ধারাভাষ্যকারও। ‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’-খ্যাত এই ম্যাজিক শুধু বিশ শতকেরই নয়, আজও কিংবদন্তি হয়ে রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়।
৪/১০
অ্যাশেস হ্যাটট্রিক— ১৯০৩ সাল। ক্রিকেটের দুনিয়ায় এক কিংবদন্তি মুহূর্তের জন্ম দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান বোলার হিউ ট্রাম্বেল। অ্যাসেস ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক। তারপর এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য ক্রিকেট দর্শকদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৯১টা বছর। ১৯৯৪ সালে ট্রাম্বেলের সেই ঐতিহাসিক রেকর্ডকে স্পর্শ করেন ওয়ার্ন। সেইসঙ্গে তাঁর ঘাতক বোলিং স্পেল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছিল বক্সিং ডে টেস্টে।
৫/১০
কালিনান-যুদ্ধ— আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যাটারদের তালিকায় আবশ্যিকভাবেই উঠে আসবে ড্যারিল কালিনানের কথা। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর গড় সংগ্রহ ৪৪.২১ রান। একাধিক রেকর্ডের মালিকানাও ছিল তাঁর ঝুলিতে। তবে এমন এক তারকাই বার বার পর্যুদস্ত হয়েছেন ওয়ার্নের কাছে। পরিসংখ্যান মতে, অজিদের বিরুদ্ধে কালিনানের গড় মাত্র ১২.১৫। আর তাঁর নেপথ্যে রয়েছেন ওয়ার্ন। টেস্ট ক্রিকেটে কালিনান ৪ বার শিকার হয়েছেন ওয়ার্নের। ওয়ান-ডেতে আরও ৮ বার। ধারাবাহিকভাবে ওয়ার্নের কাছে এই পরাজয়ের কারণে ‘শেন ওয়ার্নস বানি’ নামেই পরিচিতি গড়ে ওঠে কালিনানের।
৬/১০
১৯৯৯ বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল— মাত্র ২১৪ রানের লক্ষ্য ছিল সাউথ আফ্রিকার সামনে। ক্রিজে তখন টিকে রয়েছেন ল্যান্স ক্লুসেনার। জয় অবশ্যম্ভাবী। সেদিন যেন অপ্রতিরোধ্য প্রোটিয়া বাহিনী। গ্লেন ম্যাকগ্রা, ডেমিয়েন ফ্লেমিং সকলেই গড়ে ৫-এর বেশি রান দিচ্ছেন ওভারে। এমন পরিস্থিতিতে একটা রানআউটই হঠাৎ বদলে দিল ম্যাচের পরিস্থিতি। ক্লুসেনার মাঠ ছাড়ার পরই জ্বলে উঠলেন ওয়ার্ন। বলতে গেলে একা হাতেই সেদিন প্রোটিয়া বাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন তিনি। মাত্র ২৯ রান দিয়ে শিকার করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট। ম্যান অফ দ্য ম্যাচের মুকুট উঠেছিল ওয়ার্নের মাথায়।
৭/১০
লিলির রেকর্ড— ১৯৯৯-এর ঐতিহাসিক বিশ্বকাপ জয়ের ঠিক পরের বছর। সেবার নিউজিল্যান্ড সফর। নতুন শতাব্দীতে তাসমানিয়ার মাটিতেই এক ইতিহাসের জন্ম দিলেন শেন ওয়ার্ন। ততদিন পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেট শিকারি ছিলেন ডেনিস লিলি। তাঁর সর্বকালীন রেকর্ডকে টপকে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন ওয়ার্ন। নিউজিল্যান্ডে তাঁর রেকর্ড ব্রেকিং ৩৫৬তম শিকার হয়েছিলেন পল উইজম্যান।
৮/১০
অধরা শতরান— ২০০১ সালের কথা। অস্ট্রিলিয়ার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসেই ৫৩৪ রানের পাহাড় গড়েছে ব্ল্যাক ক্যাপরা। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা রীতিমতো সঙ্গিন। ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯২ রানে দাঁড়িয়ে রয়েছে অজিদের স্কোরবোর্ড। এই পরিস্থিতিতেই ক্রিজে নামেন ওয়ার্ন। তারপর চোখ ধাঁধাঁনো অপ্রত্যাশিত এক ব্যাটিং। ১৫৭ বলে ৯৯ রান করেছিলেন ওয়ার্ন। শেষে ড্যানিয়েল ভিটোরির বলে ক্যাচ আউট হন তিনি। অধরা থেকে যায় শতরান। তবে ক্রিজে ওয়ার্নের দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকাই নিশ্চিত হারের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনে অজিদের।
৯/১০
ম্যাজিক্যাল ৭০০— ২০০৬ সাল। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বসেছে বক্সিং ডে-র আসর। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। যেকোনো ক্রিকেট ভক্তের কাছে নিঃসন্দেহে এই ম্যাচ অমর হয়ে থাকবে চিরকাল। সেই ম্যাচে অ্যান্ড্রু স্ট্রসের স্টাম্প ছিটকে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিলেন ওয়ার্ন। ছুঁয়েছিলেন ৭০০ উইকেটের মাইলফলক। তখনও পর্যন্ত তিনিই সর্বকালের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। অবশ্য পরে সেই রেকর্ড চলে যায় মুরলীধরনের ঝুলিতে।
১০/১০
গতকাল মাত্র ৫২ বছর বয়সে আকস্মিক চলে গেলেন শেন ওয়ার্ন। রেখে গেলেন অসংখ্য কিংবদন্তি। বিতর্কও। তবে ১৫ বছরের ক্রিকেট জীবনে যে ইতিহাস তিনি তৈরি করেছেন, তা স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে আজীবন…