ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম ভারতীয় শিল্পী হেমন্ত, একশো গাড়ির কনভয় অনুসরণ করল তাঁকে

বিদেশের এক অনুষ্ঠানে স্যুট পরে মঞ্চে উঠেছেন ভারতীয় শিল্পী। বেশ ঠান্ডা তখন সেখানে। কিন্তু শ্রোতাদের দাবি প্রবল, তাঁরা ‘আসল’ মানুষটিকে চান। অগত্যা তাঁকে গ্রিনরুমে গিয়ে আবার চিরাচরিত ধুতি-শার্টের ওপর শাল জড়িয়ে আসতে হল, তখন হাততালির বন্যা। তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, যাঁর সম্পর্কে দেবব্রত বিশ্বাস বলেছিলেন – “অর হইল গিয়া ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস। অ যদি চিন দ্যাশে গিয়া সুর কইর্যাক খবরের কাগজও পইর্যা  যায়, তাও লকে খাড়াইয়া শুনব।” আপাদমস্তক বাঙালি এই মানুষটি মননে ও আবেদনে কিন্তু কম ‘আন্তর্জাতিক’ ছিলেন না। শোনা যায়, তাঁর নিখুঁত সময়জ্ঞান আর কথার দাম দেখে অনেকেই ভাবতেন, ‘লোকটা সত্যি বাঙালি তো?’ তাঁর প্রথম প্রযোজিত ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’- গল্প নির্বাচনেও এক মননশীল আন্তর্জাতিক চেতনার আভাস। 

হিন্দি লেখিকা মহাদেবী ভার্মার গল্প অবলম্বনে এ ছবি তৈরির নেপথ্যকাহিনি বহুবার আলোচিত। গল্প আর ছবির মূলগত আন্তর্জাতিক, মানবতাবাদী বক্তব্য এক অদ্ভুত নান্দনিক উচ্চতায় পৌঁছেছিল অনেকাংশে এ ছবির দুটি গানের মাধ্যমে। দেশ, জাতি, সংস্কৃতির ভেদরেখা মুছে দিয়ে গায়কের কণ্ঠ ‘নীল আকাশের নীচে’ শুয়ে থাকা ‘ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট আশা’র কথা বলে, আবার ‘ও নদীরে’ গানটি এই মহাপৃথিবীর বুকে বার বার ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে বয়ে চলা মানুষের ‘সুখ দুঃখের কথা’কে করে তোলে বিশ্বজনীন। পরে কনরাড রুক্সের ইংরেজি ‘সিদ্ধার্থ’(১৯৭২) ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে, এই গানটিই আবার প্রয়োগ করেন হেমন্ত। নোবেলজয়ী সাহিত্যিক হেরমান হেসের গল্প নিয়ে ভারতীয় পটভূমিতে ছবি, তাই পরিচালক চেয়েছিলেন নদীপথের দৃশ্যে মানানসই ভারতীয় গান রাখতে। সে কথা শুনেই ‘ও নদীরে’ ব্যবহার করার কথা এসেছিল সুরকার-গায়কের মাথায়। পরে অন্য একটি তীর্থযাত্রার দৃশ্যে তিনি গাইলেন ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ – আন্তর্জাতিক হয়ে গেল সেই গানটিও।  

‘সিদ্ধার্থ’-প্রসঙ্গে আর একটি বিষয়ের উল্লেখ করতেই হয় – এদিকে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শুভজিত সরকার। সিদ্ধার্থের বাবার সংলাপ কি নেপথ্য থেকে হেমন্তই বলেছেন? এ প্রসঙ্গে হেমন্ত বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ কোথাও কিছু বলেননি, নীরব থেকেছেন রুক্সও। অথচ বিদেশের মাটিতে তাঁর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লাইভ রেকর্ডিং-এর আগে বলা কিছু ইংরেজি কথা শুনে, সিদ্ধার্থের বাবার স্বরক্ষেপণ আর উচ্চারণভঙ্গির সঙ্গে ভালভাবে মিলিয়ে দেখলে প্রায় পরিষ্কার বোঝাই যায় – এ সংলাপ তাঁরই বলা।        

হেমন্তর প্রথম বিদেশ সফর ১৯৫৯-এ - পূর্ব আফ্রিকা হয়ে রোম ও লন্ডনে। আফ্রিকায় দেখেছিলেন, মানুষজন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভক্ত। তাই ‘লাইট ক্লাসিকাল’ই গাইতে হত তাঁকে বেশি। এক-একটি অনুষ্ঠানে কুড়ি পঁচিশটি গান গাওয়ার পরও অনুরোধ আসত, আরও চাই। গীত, গজল পর্যায়ের অনেক গান বাংলার বাইরে একসময় যথেষ্ট পরিচিতি দিয়েছিল ‘হেমন্তকুমার’কে। আমরা তো বাংলা গানের বাইরে তাঁকে তেমন শুনেই উঠতে পারলাম না। প্রবাসী ভারতীয় আর বিদেশিরা কিন্তু সে ধারার মর্যাদা দিতে ভোলেননি। 

১৯৬৪-তে ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম ভারতীয় শিল্পী হিসেবে তিনিই গিয়েছিলেন, আর পেয়েছিলেন বিপুল অভ্যর্থনা। বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় তাঁর যাত্রাপথের ধারাবিবরণী, নামার পর তাঁর গাড়িকে অনুসরণ করছে একশো গাড়ির ‘কনভয়’ – যেন বিদেশের কোন রাজা মহারাজা এসেছেন। যেখানেই যান, ঘিরে ধরেন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফারের দল। তাঁকে একটিবার ছুঁয়ে ভারতের মাটি ছোঁয়ার অনুভূতি পেতে চাইতেন সেখানকার ভারতীয় বংশোদ্ভূত জনগণ। তাঁকে দেখার জন্য হসপিটাল থেকে জোর করে চলে আসতে চাইছিলেন অশীতিপর এক বৃদ্ধ; তাঁর নাতির অনুরোধে হেমন্তই গিয়ে দাঁড়ালেন তাঁর সামনে। শুধু প্রবাসী ভারতীয়রা কেন, বিদেশি অনুরাগীদের উদ্বেলতাও কম ছিল না। আমেরিকার যে কোন শহরে তাঁর অনুষ্ঠান থাকলে তিন-চারশো মাইল দূর থেকেও ঠিক পৌঁছে যেতেন লস এঞ্জেলসের জ্যান স্টুয়ার্ট। সুইজারল্যান্ডের এক ভক্তের ভয়ানক ‘পাগলামি’ নিয়ে পরে তিনি ‘নবকল্লোল’-এর পাতায় ‘শার্লির স্বপ্ন’ নামে গল্পই লিখে ফেলেছিলেন একটা। 

বিদেশ সফরের বিচিত্র সব গল্প জানা যায় তাঁর টুকরো টুকরো স্মৃতিচারণায়, বা ঘনিষ্ঠজনদের লেখায়। বেলা মুখোপাধ্যায়ের লেখায় পাই, লন্ডনে ম্যাপ দেখে গাড়ি চালাতে চালাতে হেমন্তর গান শুনতে চাইলেন মঞ্জু দে। হেমন্ত ধরলেন, ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস...’ গানের টানে গাড়ি নির্দিষ্ট রাস্তা ছেড়ে চলে গেল আধ মাইল দূরে, অন্য পথে। আর একটি ঘটনার কথা তাঁর আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন বিশিষ্ট অধ্যাপক নিমাইসাধন বসু। তিনি তখন আমেরিকায়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান গাইতে আসছেন শুনে তিনি উৎসাহিত; কিন্তু তাঁর চেয়েও বেশি উল্লসিত তাঁদের প্রতিবেশী-গৃহিণী সাবিত্রী ভাটনগর। তাঁর একান্ত ইচ্ছে, শিল্পী ও তাঁর পরিবারকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবেন। কিন্তু মাছের ঝোল রাঁধতে তিনি ভালো পারেন না, তাই সাহায্য নিলেন শ্রীমতী বসুর। অনুষ্ঠানের পর অনুরোধ করতেই হেমন্ত চলে এলেন। আমেরিকায় কেউ আদর করে ডেকে মাছের ঝোল খাওয়াতে চাইছেন, এ কি কম ভাগ্যের কথা! আর একবার ফিজির এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে গান গাইতে গিয়ে দেখেন, প্রেক্ষাগৃহে জায়গা কম বলে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তবু বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন হাজার হাজার মানুষ। উদ্যোক্তাদের তিনি জোর দিয়ে বলেন গেট খুলে দেওয়ার কথা। গেট খুলতেই ভেতরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই জনস্রোত। নতুন করে উপলব্ধি করেন শিল্পী – তাঁর গান মুষ্টিমেয় কিছু ‘এলিট’-এর জন্য শুধু নয়, বৃহত্তর মানবসমাজের জন্য।       

আরও পড়ুন
হেমন্তের গানে রাগ ভুললেন পঙ্কজ মল্লিক, সজল হয়ে উঠল দুটি চোখ

পশ্চিমি সঙ্গীত শাস্ত্রের পরিভাষা অনুযায়ী, ‘টেনর’ আর ‘ব্যারিটোন’-এর আশ্চর্য মিশেলে ঋদ্ধ তাঁর কণ্ঠকে অনেকে তুলনা করে থাকেন ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, হ্যারি বেলাফণ্টের সঙ্গে। এসব ‘টেকনিক্যাল’ তুলনা দিয়ে অবশ্য ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না তাঁর কণ্ঠের সম্মোহনী ক্ষমতাকে। বিদেশি গান তিনি শুনতেন, খোঁজখবর রাখতেন পাশ্চাত্য সঙ্গীতের, তবে প্যাট বুনের ‘ও ও বারগাডিন’ এর আদলে ‘ও ও বেবি’-র পর যা রটেছিল (তাঁর ভাষায়, ‘আমি নাকি দিনরাত বিদেশি সুর মাথায় নিয়ে ঘুরি!’) - তা পুরোপুরি ঠিক নয়। আবার, হুইসল্ আর হামিং-এর অবিস্মরণীয় প্রয়োগে ‘এই রাত তোমার আমার’-এর জন্য জনপ্রিয়তার পাশাপাশি জুটেছিল কুৎসাও। বিদেশি সুর ‘চুরি’র মিথ্যে অভিযোগ গড়িয়েছিল অনেকদূর। তখন তিনি বিদেশে – অনুষ্ঠান সেরে একটু শান্তিতে বেড়াচ্ছেন পরিবার নিয়ে।  নিন্দুকেরা রটানোর সুযোগ পেল, মামলার সমন পেয়েই বিদেশে যেতে হয়েছে তাঁকে। দেশে ফিরে এই অপপ্রচারের জেরে যথেষ্ট বিব্রত হতে হয়েছিল তাঁকে। অবশ্য শেষ হাসিটা হেসে তিনিই বলেছিলেন, এই রটনাকারদের সামনে পেলে, নিজের পাবলিসিটি অফিসার করে নিতেন। একে কি বাঙালির রসবোধ বলা ভাল, নাকি সাহেবি ‘উইট’? দুটোই বোধহয়।    

বাংলা ছবিতে ঘটনা ও গল্পের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবার বিদেশি সুর ব্যবহার করেছেন হেমন্ত। ‘লুকোচুরি’তে কিশোরকুমারকে দিয়ে গাইয়েছেন ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’; ‘সপ্তপদী’তে পার্টি-দৃশ্যে ‘অন দ্য মেরি গো রাউন্ড’-এর সঙ্গে মিশিয়েছেন ‘এবার কালী তোমায় খাব’, নায়কের ধর্মান্তরিত হবার মুহূর্তে চার্চের বেল-এর শব্দ আর শেষ দৃশ্যে ভেসে আসা প্রার্থনা সঙ্গীতের সুরে অসাধারণ আবহ রচনা করেছেন। ‘বাদশা’র ‘লালঝুঁটি কাকাতুয়া’তে এনেছেন ‘পোলকা’ ছন্দ, ‘ভালবাসা ভালবাসা’য় ‘চুরি করা মহাপুণ্য’র আস্থায়ীতে স্প্যানিশ ‘লা পালোমা’ জাতীয় সুর। ‘অসাধারণ’ ছবিতে ক্রিসমাস ক্যারলের আদলে গেয়েছেন ‘সূর্যের রক্তরাগে’।  বিবিধ ভারতীর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন সঙ্গীতের বিশ্বায়নের কথা। ‘পৃথিবী আজ খুব ছোট হয়ে গেছে। আমরাও ওয়েস্টার্ন মিউজিক শুনছি, ওরাও আমাদের গান শুনছে। তবে একটাই কথা – সঙ্গীত যেন চিৎকার না হয়। যাতে মেলডি আছে, গভীরতা আছে, তা-ই সঙ্গীত।’ অন্যত্রও বলেছেন, ‘ওদের ভায়োলিন, পিয়ানো আমার খুব ভাল লাগে।’ তবে কোন ‘জারিং’ যন্ত্রদাপট তাঁর পছন্দ ছিল না কখনোই। সন্ধ্যা সেনের সঙ্গে আর একটি সাক্ষাৎকার-এ তাঁর বক্তব্য - 

“ওদেশের ... স্বরলিপির মধ্যে ভল্যুম ছোটবড় করার ইঙ্গিত, ভয়েস ট্রেনিংয়ের পদ্ধতি, থামার যতি, লয় থেকে লয়ান্তরে যাবার বিশেষ ভঙ্গি, সবই বাঁধাধরা। তাই লিপিবদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশের গান ভাবপ্রধান এবং আবেগনির্ভর। কাজেই এ-গানের ব্যাপকতা অনেক বেশি।” 

আরও পড়ুন
‘শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি’, ভারত-চিন যুদ্ধে গানই হাতিয়ার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের

ভাবতে অবাক লাগে, সঙ্গীতমননে কতখানি গভীরতা এবং আন্তর্জাতিকতা থাকলে দু-একটি কথায় এভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যায় পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সাথে ভারতীয় সঙ্গীতের মৌলিক পার্থক্য !            

চল্লিশের মাঝামাঝি থেকে আশির দশক – এই দীর্ঘ সময় জুড়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির সাংস্কৃতিক আত্মবিশ্বাস এবং গৌরবের অন্যতম ‘আইকন’। শেষদিকে চূড়ান্ত অসুস্থতার আগে পর্যন্ত প্রায় নিয়মিত কলকাতা-বম্বে-দিল্লি-মাদ্রাজ করে বেড়াতে হত তাঁকে। অনন্য প্রতিভার সঙ্গে রুচি, ব্যবহার ও ব্যক্তিত্বের সুচারু সমন্বয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সর্বভারতীয় সঙ্গীত ও চলচ্চিত্র জগতে শ্রদ্ধাভাজন ‘দাদা’। পাকিস্তানের গজল সম্রাট মেহদি হাসান দেখা করতে এসেছেন তাঁর কলকাতার ফ্ল্যাটে – ‘এক দেশের সম্রাট কি আর এক দেশের সম্রাটের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে আসেন না?’ বহুবার বিদেশ সফর করেছেন, পেয়েছেন প্রচুর উপহার ও সংবর্ধনা, বালটিমোর সিটির সাম্মানিক নাগরিকত্বও। লতাজির সঙ্গে দ্বৈত অনুষ্ঠান করে এসেছেন লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে। লন্ডন বিবিসি একাধিকবার প্রচার করেছে তাঁর সাক্ষাৎকার ও গান।

 অবশ্য তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে থাকত বাংলাই। লন্ডনে গেলে যে সুহৃদের বাড়িতে উঠতেন, সেই নিশীথ গাঙ্গুলি আক্ষেপ করেছেন, সুন্দর স্যুটগুলো অনুষ্ঠানে বা ইন্টারভিউতে দু-চার বার পরলেও বেশির ভাগ সময় পড়েই থাকত, দেশে নিয়েও আসেননি কখনও। তাঁর বাড়িতেই রাখা আছে বরাবরের মতো। ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে – হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর জীবনের শেষ বিদেশ সফরও করে এসেছিলেন বাঙালিদের মধ্যেই – বাংলাদেশে। সেখানে কয়েকজন উদ্যোক্তার অসৎ আচরণে প্রথমে অসুবিধায় পড়তে হলেও, এ খবর জানাজানি হতেই হস্তক্ষেপ করেছিলেন বাংলাদেশ সরকার, শিল্পী আর তাঁর সফরসঙ্গীদের সরকারি অতিথির সম্মান দিয়ে সব সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন সরকারি প্রতিনিধিরা। আর ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছিল লাখ লাখ সাধারণ অনুরাগী। বাংলাদেশি এক ভক্তকে অনেক আগে কথা দেওয়া ছিল – তার দেশে এলে অবশ্যই দেখা করবেন। এসে খোঁজ নিয়ে জেনেছিলেন, সে ভদ্রলোক মারা গেছেন ততদিনে। কথা রাখতে তার কবরের পাশে গিয়ে বসেছিলেন শিল্পী। 

আরও পড়ুন
সরে গেলেন পঙ্কজ মল্লিক, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র সঙ্গীত পরিচালনায় ২৪ বছরের যুবক হেমন্ত

শেষ করি একটি ব্যক্তিগত কথা দিয়ে। কলকাতার পুরনো রেকর্ডের দোকানে দেখা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এক বয়স্ক ভদ্রমহিলার সঙ্গে। হেমন্তকুমারের রেকর্ড-এর খোঁজ করছিলেন তিনি। আলাপ হতে জানালেন, হেমন্ত যখন সুরিনামে যান, তখন তাঁর বয়স আট কি দশ। একটি ফুলের তোড়া তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, বালিকা বয়সের সেই স্মৃতি এখনও তাঁর মনে আছে। অভিভাবকদের মধ্যে কেউ শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তাই তাঁর সামনে বলেছিলেন – বড়ো হয়ে একবার ভারতে আসতে চান। উত্তরে সস্নেহে হেসে নাকি বলেছিলেন শিল্পী, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’। এতদিন পরে পূর্বপুরুষদের দেশে আসার সুযোগ মিলেছে, কিন্তু প্রিয় শিল্পী তো আর নেই, তাই তাঁর রেকর্ডই নিয়ে যাবেন সঙ্গে। 

ব্যক্তিগত অনুভূতি হয়তো অনেকসময়ই একপেশে আর আপেক্ষিক হয়। তবে শুনে মনে হয়েছিল, জর্জ বিশ্বাস কি আর যেমন তেমন কথা বলার মানুষ ছিলেন! ‘ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস’।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘বিবিধ গানে’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যদি নিজেকে আরও একটু বেশি করে দিতেন!