নেই কোনো মানুষ, অতীতের স্মৃতি বুকে নিয়ে পড়ে আছে এই শহরগুলি

/১০

ক্লান্ত পথিক একটার পর একটা বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছেন একটু আশ্রয়ের আশায়। কিন্তু কেউ এসে দরজা খুলছেন না। কারণ বাড়িগুলি পড়ে রয়েছে, তাতে মানুষ নেই। দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘যাত্রী’ গল্পটি। তবে শুধুই গল্পে নয়, এই পৃথিবীতে এমন অনেক শহর ছড়িয়ে রয়েছে যেখানে মানুষের দেখা মেলে না। ইংরেজি ভাষায় বলা হয় ‘ঘোস্ট টাউন’। বাংলায় ভূত শব্দটিও অযৌক্তিক নয়। সত্যিই তো, অতীতে এগুলি এক একটি শহর ছিল। এখন আর নেই।

/১০

যেমন ধরা যাক ইউক্রেনের প্রাইপ্যাট (Pripyat) শহরটির কথাই। খুব বেশি পুরনো শহর নয়। ১৯৭০ নাগাদ এই শহর তৈরি হয়েছিল চের্নোবিল পরমাণু কেন্দ্রের কর্মচারীদের থাকার জন্য। তবে বিলাসবহুল শহরটির ভাগ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯৮৬ সালেই চের্নোবিল দুর্ঘটনা ঘটে যায়। প্রাইপ্যাট শহরের ৩১ জন মানুষ মারা যান সেই দুর্ঘটনায়। বাকিরাও শহর ছেড়ে চলে যান এক এক করে।

/১০

এমনই আরেকটি শহর মন্টসেরাটের প্লাইমাউথ (Plymouth)। শহরের গা ঘেঁষেই ছিল বিরাট এক আগ্নেয়গিরি। তবে কয়েক শতাব্দী ধরে ঘুমিয়েই ছিল সেটি। ১৯৯৫ সালে হঠাৎ বিষ্ফোরণ ঘটে সেখানে। বহু মানুষ মারা যান। বাকিরাও পালিয়ে যান। তবে লাভার স্রোতের ওপর মাথা তুলে এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেখানকার অট্টালিকাগুলি।

/১০

ইতালির ক্র্যাকো (Craco) শহরের বয়স কিন্তু এতটা কম নয়। অন্তত হাজার বছর ধরে খ্রিস্টধর্মের গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত ছিল শহরটি। সারা বছর ধরে নানা অনুষ্ঠানে ভিড় জমাতেন গোটা ইউরোপের মানুষ। ১৯৬৬ সালে হঠাৎই ধস নামার আশঙ্কায় শহর ছেড়ে পালিয়ে যান সমস্ত মানুষ। ধস অবশ্য নামেনি। কিন্তু ক্র্যাকো শহরের বাসিন্দারা আর ফিরে আসেননি।

/১০

সাইপ্রাস দ্বীপের ভারোসা (Varosha) শহরটি জনশূন্য হয়ে যায় যুদ্ধের কারণে। এক সময় এই শহরেই ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বিলাসবহুল রিসর্ট। ১৯৭৪ সালে তুর্কি আক্রমণে ব্যাপক প্রাণহানি হয় শহরে। যুদ্ধের ভয়ে শহর ছেড়ে পালান বাকিরাও। পরে বছর দশেক ভারোসা শহরে কিছু সেনাছাউনি ছিল। এখন আর তাও নেই।

/১০

নামবিয়ার কোলম্যানস্কোপ (Kolmanskop) শহরটিও অর্থনৈতিক দিক থেকে রীতিমতো সমৃদ্ধ ছিল। আর তার কারণ ছিল হিরের খনি। বিশ্বের ১২ শতাংশ হিরের যোগান দিত কোলম্যানস্কোপ। তবে বিপুল পরিমাণ খননকার্যের কারণেই ১৯৩১ সালের পর আর কোনো খনিতেই হিরে পাওয়া যায়নি। ফলে শহরের বাসিন্দারাও কাজের সন্ধানে চলে গিয়েছেন অন্যত্র। এখন চারিদিকে ধু ধু মরুভূমি। আর তার মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের বাড়িগুলি।

/১০

আইভরি কোস্টের গ্র্যান্ড-বাসাম (Grand-Bassam) শহরটি ছিল একটি বন্দর শহর। ফরাসি উপনিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলির একটি। ফলে সেখানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স এবং আফ্রিকার বহু মানুষই এসে জুটেছিলেন। ১৮৮০ সাল থেকেই আফ্রিকার অন্যতম জনবহুল শহরগুলির একটি ছিল গ্র্যান্ড-বাসাম। তবে ১৯২০ সাল নাগাদ ফরাসি ঔপনিবেশিকরা এখান থেকে বন্দরটি সরিয়ে নিয়ে যান। সেইসঙ্গে চলে যান শহরের মানুষরাও।

/১০

আবার ওয়েস্ট আফ্রিকার চিংগেটি (Chinguetti) শহরটির ইতিহাস অন্তত ১২০০ বছরের পুরনো। তখন মাউরি উপজাতির রাজধানী ছিল এই শহর। পরে ইসলামিক যুগেও শহরের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাকেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল চিংগেটি। তবে সপ্তদশ শতক নাগাদ সাহারা মরুভূমি গ্রাস করে নেয় শহরটিকে। এখন কেবল পর্যটকদের ভিড় জমে কখনও কখনও। স্থায়ী বাসিন্দা কেউই নেই।

/১০

সাউথ জর্জিয়ার গ্রিটভাইকেন (Grytviken) শহরটির খ্যাতি ছিল হাঙর শিকারের জন্য। এখানকার মানুষের জীবীকাও ছিল তাই। আর বিশ শতকের শুরুতে ইউরোপের মানুষের কাছে হাঙরের তেল, হাঙরের মাংসের চাহিদাও যে কম ছিল না। অধিক মুনাফার জন্যই নির্বিচারে শিকার শুরু করেছিলেন শহরের মানুষরা। আর তার ফলেই ১৯৬৬ সাল নাগাদ দেখা যায়, সমুদ্রে আর একটিও হাঙরের অস্তিত্ব নেই। জীবীকায় টান পড়ার কারণেই শহর ছেড়ে চলে যান সকলে।

১০/১০

আজারবাইজানের আগদাম (Agdam) শহরটিও ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। একই শহরে দুটি রেলস্টেশন, অসংখ্য রেশমকল, মাদক তৈরির কারখানা, এমনকি একটি বিমানবন্দরও ছিল। আজও তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে আর্মেনিয়ান আক্রমণের পরেই শহরের মানুষ অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যুদ্ধের নিয়ম ভেঙে নির্বিচারে লুটতরাজ চালায় আর্মেনিয়রা। বহু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রাণে বাঁচতেই শহরে ছেড়েছিলেন বাসিন্দারা। কখনও জীবীকার টানে বা কখনও যুদ্ধের ভয়াবহতায় এমন অনেক শহরই আজ জনশূন্য হয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ তালিকাটি হয়তো কখনোই শেষ হবে না।

Powered by Froala Editor