২৩ মার্চ লকডাউনের দিন থেকে হিসাব করলে প্রায় চার মাস হতে চলল করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে স্তব্ধ সারা দেশ। ইউরোপের দেশগুলিতে ভাইরাস হানা দিয়েছে আগেই। অথচ এখনও এই রোগের কোনো প্রতিষেধক বা উপযুক্ত চিকিৎসা, কিছুই নেই। ভাইরাসকে আটকাতে গেলে একমাত্র হাতিয়ার সচেতনতা।
অথচ প্রকৃত সচেতনতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে একঝাঁক ভুয়ো খবর। এরকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা কী বলছেন? কীভাবে চিনব এই ভাইরাসকে? আসুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই মহামারীর বিশেষ কিছু চরিত্র।
মহামারীর চরিত্র:
১) ব্যারাকপুর অঞ্চলের ডাক্তার সায়ন্তন ব্যানার্জির কথায়, বর্তমানে বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে যত রোগী আসছে তার ৭০-৮০ শতাংশই জ্বরের রোগী। এবং তার মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগীর শরীরেই ধরা পড়ছে করোনা ভাইরাস। অর্থাৎ মোটামুটি গোষ্ঠী সংক্রমণ ঘটে গিয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি। এই গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়টি সম্প্রতি মেনে নিয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসসিয়েশনও।
আরও পড়ুন
ভারতে শুরু হয়ে গেছে কমিউনিটি স্প্রেডিং, অবশেষে স্বীকার আইএমএ চেয়ারম্যানের
২) তবে জ্বর বা শ্বাসকষ্ট ছাড়াও বেশ কিছু এক্সট্রা-পালমোনারি সিম্পটম দেখা যাচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন তাঁরা। যেমন কারোর শরীরে ডায়রিয়া অথবা কারোর শরীরে মাথা ব্যথার পিছনেও মূল কারণ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। তবে শ্বাসকষ্টের সমস্যা না থাকলে সাধারণত রোগীর মৃত্যু হচ্ছে না, এবং সামান্য কিছু চিকিৎসার পরেই সেরে উঠছেন তিনি।
আরও পড়ুন
এক সময় ছিল ‘হটস্পট’, দিল্লির করোনা-জয় উদ্বুদ্ধ করছে গোটা দেশকে
৩) প্রথমদিকে অবশ্য চিকিৎসকরা মনে করেছিলেন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনের মতো কো-মর্বিডিটির কারণেই মৃত্যু ঘটছে রোগীদের। তবে এখন দেখা যাচ্ছে অন্য সমস্ত রোগমুক্ত স্বল্প বয়সী রোগীদের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে করোনা ভাইরাস। অর্থাৎ শরীরে অক্সিজেনের অভাবকেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ হিসাবে চিহ্নিত করছেন চিকিৎসকরা।
৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে রোগীর ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। আর তার পরেই মৃত্যু ঘটছে। এর জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসা।
৫) করোনা আক্রান্ত মানুষের ফুসফুসে একধরনের অর্ধস্বচ্ছ থকথকে তরল জমছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। এই তরল ধীরে ধীরে সমস্ত ফুসফুসকে গ্রাস করে নিচ্ছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি এতটাই ধীর গতিতে চলছে যে অনেক সময়েই শ্বাসকষ্টের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে শরীর। এবং শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা বেশ কমে গেলেও রোগীরা শ্বাসকষ্টের কথা জানাচ্ছেন না। ডাক্তারি পরিভাষায় এই ঘটনাকে বলা হয় হ্যাপি হাইপক্সিয়া।
কিন্তু এখন এই ভাইরাসের সঙ্গে তাহলে লড়াই করবেন কীভাবে? এখানেও ভরসা রাখতে হবে চিকিৎসকদের উপরেই। আসুন দেখে নিই তাঁরা কী বলছেন।
১) প্রথমত এই মহামারী পরিস্থিতিতে কোনোরকম উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
২) মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের পাশাপাশি এই লড়াইতে আমাদের অস্ত্র পালস্-অক্সিমিটার। এই যন্ত্রের সাহায্যে বুঝতে পারবেন আপনার শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কত শতাংশ। কোনো কারণে তা ৯৫ শতাংশের নিচে পৌঁছে গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩) জ্বর এলে অবশ্যই পরীক্ষা করান। একমাত্র সঠিক পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমেই করোনা সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
৪) শরীরে যেকোনো উপসর্গ ধরা পড়ার সময় থেকে ১৭ দিন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকুন। যদি একটানা ৩ দিন জ্বর না থাকে এবং ১০ দিন পর্যন্ত অন্যান্য উপসর্গ থেকে যায় তাহলে বুঝতে হবে করোনা সংক্রমণের মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও ৭ দিন পর্যবেক্ষণের মধ্যে থাকা প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, উপযুক্ত চিকিৎসাই মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে। হোমিওপ্যাথি বা কবিরাজি, কোনো পদ্ধতিতেই এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই। তাই কুসংস্কারে কান না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার সুরক্ষা আপনার হাতেই।
Powered by Froala Editor