ভয়াবহ খরার শিকার সোমালিয়া, প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা ৩ লক্ষাধিক শিশুর!

সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রের শিরোনামে একাধিকবার উঠে এসেছে সোমালিয়ার (Somalia) নাম। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ এবং গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন হাজার হাজার সোমালি মানুষ। এবার আরও এক দুর্যোগের সম্মুখীন আফ্রিকার এই দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অনাবৃষ্টির জেরে ভয়াবহ খরার (Drought) শিকার সোমালিয়া। সেইসঙ্গে দেখা দিচ্ছে, বিগত এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনাও।

করোনা মহামারীর পর থেকেই একটু একটু করে আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছিল সোমালিয়ার। তারওপর পঙ্গপালের আক্রমণ এবং গোষ্ঠী সংঘাতে দেখা দিয়েছিল খাদ্য সংকট। ফুরিয়েছিল ভাঁড়ার। এবার অনাবৃষ্টির জেরে প্রায় সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ হয়ে গেল দেশের খাদ্য উৎপাদনও। জাতিসংঘের সমীক্ষা অনুযায়ী, চরম অপুষ্টির শিকার সোমালিয়ার প্রায় ১৪ লক্ষ শিশু। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী এবং পর্যাপ্ত ওষুধের জোগান না পাওয়া গেলে চলতি গ্রীষ্মেই প্রাণ হারাতে পারে সাড়ে তিন লক্ষ শিশু। পুষ্টির অভাবে ইতিমধ্যেই মিসেল এবং ডায়েরিয়ার প্রকোপ ছড়িয়েছে সোমালিয়ায়। 

সোমালিয়ার আর্থিক পরিকাঠামো ও উৎপাদন অনেকটাই নির্ভরশীল সে-দেশের বৃহত্তম নদী জুবার ওপর। বিগত দু’বছর ধরে বৃষ্টির অভাব এবং ক্রমাগত তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ক্রমশ শুকিয়ে উঠেছে জুবা। বর্তমানে সেখানে প্রায় জল নেই বললেই চলে। ফলে, কৃষিকাজ এবং অন্যান্য গ্রামীণ শিল্পেও তার প্রভাব পড়ছে সরাসরি। উপার্জনের আশায়, গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় জমাচ্ছেন পুরুষরা। মহিলা ও শিশুরা আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে সেখানেও অভাব পানীয় জল, খাদ্য এবং ওষুধের। 

সোমালিয়ার এই পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতি। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও, যুদ্ধের পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে সোমালিয়ার খাদ্য-সংকটে। সাধারণত আমেরিকা এবং ইউরোপীয় শক্তিশালী দেশগুলি থেকেই বড়ো অঙ্কের আর্থিক অনুদান পায় সোমালিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি। কিন্তু যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ত্রাণই ইউক্রেনের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় অনুদান শূন্য হয়ে পড়েছে সোমালিয়া। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির অভিমত, সাম্প্রতিক পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য কেবলমাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ মজুত রয়েছে সোমালিয়ায়। 

আরও পড়ুন
শীত পড়তেই চরম খাদ্য সংকটে আফগানিস্তান, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা

তবে শুধু সোমালিয়াই নয়। কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সুদান-সহ ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’-খ্যাত সমস্ত দেশগুলিই শিকার খরার। সার্বিকভাবেই ক্রমশ অবনতি হচ্ছে পরিস্থিতির। এভাবে চলতে থাকলে, বিগত ২৫ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে আফ্রিকা। এখন দেখার আদৌ পশ্চিমী দেশগুলি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় কিনা…

আরও পড়ুন
দুর্ভিক্ষের ইতিহাসেই ভারত-ইংল্যান্ডের যোগসূত্র খুঁজছে যাদবপুর ও এক্সেটার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চরম দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন ইয়েমেন, সাহায্যের আর্জি রাষ্ট্রপুঞ্জের

More From Author See More