গত মার্চ মাসেই সূর্যের গায়ে আকস্মিক ‘কলঙ্ক’-এর দেখা পেয়েছিলেন নাসার গবেষকরা। তা আদতে সূর্যপৃষ্ঠে সংকীর্ণ অথচ গভীর একটি গর্ত। আর তার পরেই সতর্কতা জারি করেছিলেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষকরা। সূর্যপৃষ্ঠের এই পরিবর্তনের পরিণতি যে ভয়ঙ্কর হতে চলেছে সে ব্যাপারে জানান দিয়েছিলেন তাঁরা। এবার সত্যি হতে চলেছে সেই আশঙ্কা। ছোট্ট সেই ছিদ্রের কারণেই আজ রাতে পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়তে চলেছে ভয়ঙ্কর সৌরঝড়।
স্পেস ডট কম এবং নাসার গবেষকদের অনুমান, সোমবার রাতেই পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে এই সৌরঝড়। যার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়বে বিষুবরেখার নিকটবর্তী উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশের ওপর। এই অঞ্চলে রাতের আকাশে দেখতে পাওয়া যাবে অপার্থিব এই মহাজাগতিক আলোর খেলা। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সূর্যপৃষ্ঠের ওপরে সৃষ্ট ছোট্ট এই গর্ত কীভাবে সৌরঝড়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে?
গবেষকরা জানাচ্ছেন, সৌরঝড়ের মূল উপাদান হল আয়নিত কণা বা প্লাজমার স্রোত। সৌর-কলঙ্ক থেকে তা বেরিয়ে এলে ভেসে বেড়াতে থাকে মহাশূন্যে। পরবর্তীতে মহাজাগতিক কোনো বস্তুর চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে ভাসমান এই আয়নিত কণাগুলি ঢুকে পড়লে, গতিবৃদ্ধি হয় তাদের। চৌম্বকীয় আকর্ষণ বলে দ্রুত গতিতে তা আঘাত হানে সেই পদার্থের ওপরে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে ঘটতে চলেছে সেই ঘটনাই। পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ক্রমশ গতি বাড়িয়ে চলেছে আসন্ন সৌরঝড়টি।
নাসা-সহ একাধিক মহাকাশ সংস্থার পূর্বাভাস জানাচ্ছে, আনুমানিক ১৬ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে এই সৌরঝড়। গতি বৃদ্ধি পেতে পারে আরও। তবে উচ্চশক্তি সম্পন্ন এই প্লাজমা স্রোত সরাসরি আঘাত করতে পারবে না পৃথিবীপৃষ্ঠে। সেক্ষেত্রে সুরক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়াবে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রই। ভূপৃষ্ঠ স্পর্শ করার বহু আগেই পৃথিবীর বাইরের স্তরের বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর প্রভাব নষ্ট হবে সূর্যের এই শক্তিশালী বিকিরণের।
আরও পড়ুন
সৌরজগতের মতোই নক্ষত্র ও গ্রহসমাবেশ; ২০০ আলোকবর্ষ দূরের সন্ধান দিল পড়ুয়ারা
তবে একেবারেই যে প্রভাব পড়বে না, তেমনটা নয়। সৌরঝড়ের কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বিভিন্ন কৃত্রিম উপগ্রহের। যার ফলে জিপিএস নেভিগেশন, মোবাইল টাওয়ার, স্যাটেলাইট টিভি ইত্যাদি বিভিন্ন পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উচ্চশক্তি সম্পন্ন পাওয়ার লাইন এবং ট্রান্সফর্মার। যার ফলে বিদ্যুৎ সংযোগও ব্যাহত হতে পারে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
আরও পড়ুন
সৌরজগতের দূরতম সদস্য প্লুটোও উষ্ণ অবস্থায় ছিল দীর্ঘদিন, বলছে গবেষণা
তবে এমন ঘটনা এই প্রথম না। আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে ১৯৮৯ সালে একই ধরনের একটি সৌরঝড় আঘাত এনেছিল পৃথিবীতে। আর তার কারণে ৯ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল কানাডা। তখন অবশ্য এতটাও উন্নত ছিল না বিজ্ঞানের প্রযুক্তি। বর্তমানে উন্নত যন্ত্রাংশের মাধ্যমে অনেকটা আগে থেকেই সতর্কতা জারি করতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তা সত্ত্বেও থেকেই যাচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা…
আরও পড়ুন
সৌরজগতের মধ্যেই রয়েছে শতাধিক ‘পৃথিবী’, খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা
Powered by Froala Editor