৭ বছর আগে গোটা গ্রামে বিদ্যুৎ এনে দিয়েছিল বড়ো বড়ো সৌরপ্যানেল। গোটা গ্রামের বিদ্যুতের যোগান ছিল সৌরবিদ্যুৎ। বিহার রাজ্যে সেই প্রথম কোনো গ্রামজুড়ে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ‘সোলার ভিলেজ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল জেহানাবাদ জেলার ধরণী গ্রাম। তবে এরপর প্যানেলগুলি এক এক করে খারাপ হয়ে গিয়েছে। তার মেরামতি তো দূরের কথা, সামান্য পরিচর্যার ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। সোলার প্যানেলগুলি (Solar Panels) এখন গোয়ালের ছাউনি (Cattle Shed) হিসাবে ব্যবহার করা হয়। গ্রামে অবশ্য বিদ্যুতের অভাব তৈরি হয়নি। কারণ তাপবিদ্যুৎচালিত পাওয়ার গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দূষণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সংকট মেটাতে যখন সারা পৃথিবীতে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন ধরনী গ্রামের এই প্রকল্পের ব্যর্থতা নানা প্রশ্ন তুলে দেয়।
১৯৮১ সাল নাগাদ ধরণীর আশেপাশের প্রায় সমস্ত গ্রামেই বিদ্যুৎ সংযোগ এসে যায়। তবে এই গ্রামটি অন্ধকারেই থেকে যায়। অবশেষে ২০১৪ সালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রিনপিসের উদ্যোগে ১০০ কিলোওয়াটের একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি হয়। প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার। যদিও গ্রামবাসীরা সেদিন এই প্রকল্পে যে খুব একটা খুশি হয়েছিলেন, এমন নয়। বরং তাঁরা চেয়েছিলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত পাওয়ার গ্রিড থেকেই তাঁদের গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হোক। সেটাই আসল বিদ্যুৎ। আর সৌরবিদ্যুৎকে তাঁরা বলেছিলেন নকল বিদ্যুৎ। মুখ্যমন্ত্রী সেদিন বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, বর্তমানে পরিবেশ দূষণ মোকাবিলায় বিকল্প বিদ্যুৎই একমাত্র পথ। তাছাড়া কয়লার সঞ্চয় শেষ হয়ে আসছে। ফলে তাপবিদ্যুৎও একদিন আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু সৌরবিদ্যুৎ চিরকাল পাওয়া যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় গ্রামবাসীরা যে খুব একটা আশার আলো দেখেছিলেন, এমন নয়। কিন্তু বিদ্যুৎ তো ঘরে এসেছিল।
এর বছর দুয়েকের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় সমস্যা। ততদিনে ধরণী গ্রামে তাপবিদ্যুৎ সংযোগের সুযোগও এসে গিয়েছে। আর ১০০ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে টেলিভিশন বা রেফ্রিজারেটরের মতো ভারী যন্ত্র চালানো যায় না। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো সমস্যা ছিল বিদ্যুতের খরচ। যেখানে তাপবিদ্যুতের খরচ প্রতি ইউনিটে ছিল ৫ টাকা, সেখানে সৌরবিদ্যুতের দাম ধার্য করা হয়েছিল ৭ টাকা। তাই গ্রামবাসীরা একে একে তাপবিদ্যুতের সংযোগ নিতে শুরু করেছিলেন। পরের বছরের মধ্যেই অর্ধেকের বেশি সৌরপ্যানেল খারাপ হয়ে যায়। সেগুলি সারানোর কোনো ব্যবস্থাও কর হয়নি।
এখন সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে কয়েকটি সোলার প্যানেল এখনও কাজ করে। সেগুলো গ্রিনপিস সংস্থার কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছেন কয়েকজন কৃষক। তাঁরা জলসেচের কাজে ব্যবহার করেন এই প্যানেলগুলি। আর বাকিগুলো দিয়ে তৈরি হয়েছে গোয়ালের ছাউনি। তবে এই প্রকল্পের ব্যর্থতা আরেকবার প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, আদৌ কি আসন্ন সংকট মোকাবিলায় তৈরি ভারতের সামগ্রিক ব্যবস্থা? সরকারিভাবে চেষ্টা করলে কি গ্রামবাসীদের আরেকটু সচেতন করা যেত না? সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মক্ষমতাও বাড়ানো যেত। আর সেগুলির যথেষ্ট পরিচর্যার বন্দোবস্তও করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছুই হয়নি। অদূর ভবিষ্যতেও এই সংকটের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে কি?
আরও পড়ুন
নিউটাউনের ফুটপাতে সোলার প্যানেল, অভিনব পরিকল্পনা এনকেডিএ-র
তথ্যসূত্রঃ In Bihar’s ‘first solar village’, the solar power station has become a makeshift cattle shed, Manish Kumar, Scroll.in
আরও পড়ুন
নিজে হাতে সোলার সাইকেল তৈরি করে চমক গুজরাটের স্কুলপড়ুয়ার
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রাজ্যের প্রথম সরকারি বিদ্যালয় হিসাবে সারেঙ্গাবাদে বসল সোলার প্যানেল