এপ্রিল মাস। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তখন একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে ভারতের সব রাজ্যেই। তেমনই তার প্রাদুর্ভাব ছুঁয়েছে নাগাল্যান্ডকেও। পাহাড়ি রাজ্য হওয়ায় জনবসতিও যে খুব ঘন, তেমনও নয়। কাজেই অ্যাম্বুলেন্সের পরিষেবা পেতে খানিক সমস্যা তো ছিল। উপরন্তু ভাইরাসের সংক্রমণে সেই চাহিদাই আকাশ ছোঁয়। তবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে নিজেই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের পরিষেবা দিয়ে চলেছেন নাগাল্যান্ডের ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’ হ্যাংনা কোনিয়াক।
হ্যাঁ। নাগাল্যান্ডের অন্তঃসত্ত্বাদের কাছে বছর উনচল্লিশের হ্যাংনা এখন দেবদূতই। পরিমাণ মতো অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে মেটাতে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িই হয়ে উঠেছে অ্যাম্বুলেন্স। আর তার চালক স্বয়ং তিনি। এখনও অবধি মোট ৪৮ জন প্রসবিনীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন হ্যাংনা। দিন, রাত যখনই হোক তাঁর কাছে ফোন গেলেই হাজির হচ্ছেন নিজস্ব গাড়ি নিয়ে। নিঃস্বার্থ ভাবেই করে যাচ্ছেন এই দায়িত্ব পালন। কোনোরকম অর্থাগমের কথা না ভেবেই।
এই উদ্যোগের সূচনা হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তখন লকডাউন চলছে ভারত জুড়ে। বারবার অ্যাম্বুলেন্সের খোঁজ করেও তাঁর প্রতিবেশিনী পাচ্ছিলেন না সেই সুবিধা। এদিকে পাল্লা দিয়েই বাড়ছে প্রসব যন্ত্রণা। নিজেই এগিয়ে এসেছিলেন হ্যাংনা। গাড়ি করে তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিলেন হাসপাতালে। সেই ঘটনাই তাঁকে নতুন করে ভাবায় আরও বড়ো করে এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। সত্যিই এ তো সামান্য এক টুকরো ছবি। সারা রাজ্য জুড়েই তো চলছে একই রকম ঘটনা। সকলের পাশেই যদি দাঁড়ানো যায় এভাবে?
তবে ব্যক্তিগত ক্ষমতাও তো সীমিত। ফলে জেলাস্তরেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছে হ্যাংনাকে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই নিজের ফোন নম্বরের প্রচার করেন তিনি। আর তার পর থেকে কার্যত নাগাল্যান্ডের সঙ্গে জুড়ে গেছে হ্যাংনার ব্যক্তিগত এই অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা।
তবে সারা রাজ্যে অন্তঃসত্ত্বাদের এবং রোগীদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য বহু মানুষকেই অনুরোধ করেছেন হ্যাংনা। চেয়েছেন শুধু জেলায় নয়, বরং রাজ্যজুড়েই নেওয়া হোক এমন উদ্যোগ। তবে কেউ-ই তাঁর ডাকে সাড়া দেয়নি। একাই লড়ে যাচ্ছেন হ্যাংনা। লড়ে যাচ্ছেন আক্রান্ত হওয়ার ভয়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই। ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’-রা বোধ হয় এমনই হয়। তাই না?
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
শাস্তির বদলে নিয়মিত আস্কারা পাচ্ছেন অপরাধীরা : উত্তরপ্রদেশের সমাজকর্মী বীণা রানা