প্রয়াত স্বামী অগ্নিবেশ, থেমে গেল প্রতিবাদের আরেকটি স্বর

একের পর এক মৃত্যুর খবরে ভরে যাচ্ছে ২০২০ সালের ক্যালেন্ডারের পাতা। এর মধ্যেই সেই তালিকায় উঠল আরও একটি নাম। শুক্রবার সন্ধেয় প্রয়াত হলেন ভারতের রাজনীতি জগতের এক ব্যতিক্রমী চরিত্র স্বামী অগ্নিবেশ। দীর্ঘদিন ধরেই লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত মঙ্গলবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শুক্রবার সন্ধে ৬টার সময় হার্ট অ্যাটাক হলে আর তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ৬:৩০-এ তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

অন্ধ্রপ্রদেশের ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে অগ্নিবেশ সন্ন্যাসের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন অতি কম বয়সেই। কিন্তু দেশের আর পাঁচজন সন্ন্যাসীর সঙ্গে তাঁকে যেন ঠিক মেলানো যায় না। এমনকি অনেক সময় হিন্দু সন্ন্যাসীদের বিরোধিতার মুখেও পড়েছেন তিনি। বছর দশেক আগে কাশী শহরে একদল সন্ন্যাসী তাঁর কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছেন। স্বামী অগ্নিবেশের দৃষ্টি কিন্তু থেকেছে মানুষের দিকেই। বন্ডেড লেবার বা বান্ধুয়া শ্রমিকদের মুক্তির দাবি নিয়ে তাঁর সামাজিক কাজ শুরু। এঁদের নিয়েই তৈরি তাঁর প্রথম সংগঠন বান্ধুয়া মুক্তি মোর্চা।

তবে সামাজিক কাজে তাঁর জনপ্রিয়তা খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে মূল ধারার রাজনীতিতে ঢুকতে বাধ্য করল। তিনি গড়ে তুললেন ‘আর্য সভা’। বৈদিক সমাজবাদকে এই দলের আদর্শ বলে মনে করেছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে হরিয়ানার বিধানসভায় বিধায়ক হিসাবে প্রবেশ। সামলেছেন শিক্ষা দপ্তরের মন্ত্রিত্বও। তবে এর পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তে চলতে থাকা আন্দোলনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বারবার।

পশ্চিমবঙ্গে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের সময় এসেছেন তিনি। মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর উপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন। ইউপিএ জমানায় অপারেশন গ্রিন হান্টের সময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ৫ জনের দলে ছিলেন স্বামী অগ্নিবেশও। আরবান নকশাল নয়, তাঁকে সবাই চিনতেন নকশাল মঙ্ক নামে। আর এই প্রতিবাদী সত্ত্বা জীবিত ছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। ২০১১ সাল থেকে লোকপাল বিল আন্দোলনের ময়দানে যেমন দেখা গিয়েছে তাঁকে, তেমনই মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে গিয়েছেন। দুবছর আগে পর্যন্ত শাসক দলের কর্মীদের হাতে মার খেয়েছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রতিবাদী স্বরও থেমে গেল।

আরও পড়ুন
প্রয়াত ফরেস্ট ফেন, রেখে গেলেন গুপ্তধনের অপেক্ষায় থাকা অসংখ্য অনুরাগীকে

স্বামী অগ্নিবেশের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নানা স্তরের রাজনীতি ও সামাজিক কর্মীরা। আইনজীবি প্রশান্ত ভূষণ এই সন্ন্যাসী বিপ্লবীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু মানুষের প্রতিবাদী মন থেকে স্বামী অগ্নিবেশের অস্তিত্ব একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব হবে না।

আরও পড়ুন
প্রয়াত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী গোবিন্দ স্বরূপ, শেষ হল দেশের রেডিও-অ্যাস্ট্রোনমি চর্চার একটি অধ্যায়

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দেশের প্রথম মহিলা কার্ডিওলজিস্ট তিনিই, ১০৩ বছর বয়সে প্রয়াত ডাঃ পদ্মাবতী

Latest News See More