তাঁর অভিধানে ‘দুর্গম’ বলে শব্দ ছিল না কোনো। তাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিন্দুতেও অনায়াসেই পৌঁছে গিয়েছিলেন কৃত্রিম অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই। তবে একবার নয়। দশ-দশবার। পার্বত্য হিমালয় যেন একান্ত বন্ধু ছিল তাঁর। তাই পর্বতারোহণের সুযোগ এলেই নতুন উদ্যম খুঁজে পেতেন তিনি।
অ্যাং রিটা শেরপা, এই অসম্ভব গিনেস রেকর্ডের অধিকারীই শেষ অবধি থামলেন। ৭২ বছর বয়সেই ছেড়ে গেলেন নেপালের বরফে-মোড়া স্বর্গরাজ্য। বেশ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন মস্তিষ্ক এবং লিভারের সমস্যায়। সোমবার কাঠমান্ডুতে নিজের বাড়িতেই প্রয়াত হন বিখ্যাত এই পর্বতারোহী।
১৯৮৩ সালে প্রথমবার এভারেস্ট-জয় করেছিলেন অ্যাং রিটা। ১৯৯৬ সালের মধ্যেই আরও ৯ বার অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই এভারেস্টে আরোহন করেছিলেন তিনি। তবে সম্মান মেলে অনেক পরে। ২০১৭ সালে গিনেস বুক তাঁর এই রেকর্ডকে স্বীকৃতি দেয়। প্রায় ২৪ বছরেও তাঁর এই রেকর্ডের ধারে কাছে এখনও পৌঁছাতে পারেনি কেউ।
এখানেই শেষ নয়। অ্যাং রিটাই ছিলেন পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যিনি, শীতকালে ভয়াবহ এভারেস্টকেও বশ করেছিলেন পায়ের তলায়। ১৯৮৮ সালে সেই অসাধ্যসাধনের কৃতিত্বের জন্যেও গিনেস বুকে অমর হয়ে রয়েছেন অ্যাং রিটা সেরপা। হিমালয়ের সঙ্গে এই চিরন্তন সম্পর্কের জন্যই নেপাল-তথা সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘স্নো-লেপার্ড’ নামে। তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল নেপালের পর্বত আরোহন প্রশিক্ষণের মধ্যেও।
তবে শুধুমাত্র তাঁর পর্বতারোহনের কথা বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায় তাঁর ব্যক্তিত্ব। হিমালয়ের একজন যোগ্য বন্ধু হিসাবেই প্রকৃতির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যাং রিটা। অভিযাত্রী এবং পর্যটকদের অবারিত উপস্থিতিই পর্বত দূষণের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিমালয়ের এই বিপর্যস্ত পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। মানুষকে সচেতন করার একাধিক উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে তাঁকে বহুবার। পাশাপাশি নেপালের পর্যটন শিল্পের পিছনেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
সোমবার মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ কাঠমান্ডুর একটি বৌদ্ধ মনেস্টারিতে সংরক্ষিত করা হয়। আগামী সপ্তাহে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলেই জানা গেছে। কিংবদন্তি এই অভিযাত্রীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা নেপালই। দুঃখপ্রকাশ করেছেন উচ্চপদস্ত রাজনৈতিক নেতা, সহ-অভিযাত্রীরা। ‘অসম্ভব’-এর সঙ্গে সমার্থক হয়ে ওঠা এই মানুষটির মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই শেষ হল এভারেস্ট আরোহনের একটি অধ্যায়, হারিয়ে গেল একটি জীবন্ত ঐতিহ্য...
আরও পড়ুন
ওআরএস-কে এনে দিয়েছিলেন স্বীকৃতি, প্রয়াত কিংবদন্তি বাঙালি চিকিৎসক ডা. ধীমান বড়ুয়া
Powered by Froala Editor