কখনো তাঁর প্রতিপক্ষ ছিল জলদস্যু, কখনো আবার পিরানহা, শঙ্কর মাছ বা ভয়ঙ্কর অণুজীব। তবে কোনো প্রতিকূলতাই আটকাতে পারেনি তাঁকে। কথা হচ্ছে স্লোভানিয়ান সাঁতারু মার্টিন স্ট্রেলকে (Martin Strel) নিয়ে। না, ফ্লেপসের মতো তাঁর নামের পাশে ঝলমলে স্বর্ণপদকের সম্ভার নেই ঠিকই। কিন্তু বিগত দু’দশক ধরে সাঁতারের জগতে বার বার নজির তৈরি করেছেন স্ট্রেল। তৈরি করেছেন একের পর এক বিশ্ব রেকর্ড। এবার সাঁতারকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাতে আরও একটি একক প্রকল্প নিলেন ৬৭ বছর বয়সী স্লোভানিয়ান সাঁতারু (Slovenian Swimmer)। ঘোষণা করলেন, সাঁতার কেটে তিনি ভ্রমণ করবেন ১৩০টি দেশ।
২০০৪ সালের কথা। তখন স্ট্রেলের বয়স ৪৬ বছর। প্রথমবার একটি গোটা নদী সাঁতরে পার করার একক প্রকল্প নেন স্ট্রেল। আর শেষ পর্যন্ত সফল হয় তাঁর সেই উদ্যোগ। ৫৮ দিনের প্রচেষ্টায় অতিক্রম করেন ১৮৬৬ মাইল দীর্ঘ দানিউব নদী। তৈরি করেন এক নতুন নজির। এর পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাঁর কৃতিত্বের তালিকা। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিসিসিপি, কোলপা, পারানা নদী।
তবে গোটা বিশ্বজুড়ে তিনি আলোচনায় উঠে আসেন ২০০৫ সালে। সেবছর চিনের দীর্ঘতম নদী ইয়াংজি সাঁতরে পার করেন স্ট্রেল। স্থানীয়রা তো বটেই, চিন প্রশাসনও তাঁকে সাবধান করেছিল। তবে হাল ছাড়েননি তিনি। ৫১ দিনের প্রচেষ্টায় সফলভাবেই পেরিয়ে গিয়েছিলেন ২৪৮৭ মাইলের দীর্ঘ নদীপথ। তৈরি করেন অভিনব এক বিশ্বরেকর্ড।
২০০৭ সালে নীল নদে সাঁতার কাটার অনুমতি পেলেও, সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন স্ট্রেল। কেননা নীলনদের স্রোত শান্ত হওয়ায়, সাঁতার কাটতে নাকি কোনো প্রতিকূলতা নেই সেভাবে। বদলে তিনি বেছে নেন আমাজন। ৩২৭৪ মাইল দীর্ঘ আমজনের সমস্ত হার্ডলই সফলভাবেই পেরিয়ে গিয়েছিলেন স্ট্রেল। কিন্তু তার দামও দিতে হয়েছিল তাঁকে। পিরানহা, হাঙ্গরের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনি। আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেঙ্গুতেও। তাছাড়াও শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল ভয়ঙ্কর প্যারাসাইট। আংশিকভাবে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিলেন শঙ্কর মাছের লেজের আঘাতে। কোনোরকম চিকিৎসা ছাড়াই লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন
পক্ষাঘাত থেকে ফিরে সাঁতারের প্রশিক্ষক, অনুপ্রেরণার অন্য নাম ক্লিফ ডেভরিস
আশ্চর্যের বিষয় হল, শৈশব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোদিনই সাঁতারের প্রশিক্ষণ নেননি স্ট্রেল। খেলাধুলার সঙ্গেও সেইভাবে সম্পর্ক ছিল না তাঁর কোনোদিনই। একটা সময় যুগোস্লাভ সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকে অবসর নেওয়ার পরই আকস্মিক ওজন বেড়ে যায় স্ট্রেলের। ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেই সাঁতারের পথকে বেছে নেন স্ট্রেল। তারপর সাঁতার হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আরও পড়ুন
মেঘনার স্রোতের বিপরীতে ৪ ঘণ্টা সাঁতার, নজির ৬৩ বছরের প্রৌঢ়ের
গতকাল সংযুক্ত আরব আমিশাহির ৫০তম প্রতিষ্ঠাদিবস উপলক্ষে ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুবাই ওয়াটার ক্যানাল অতিক্রম করেন স্ট্রেল। বিশেষ সম্মাননা জ্ঞাপন করেন আরবের দেশটিকে। সেইসঙ্গে ঘোষণা করেন তাঁর বিশ্ব সাঁতার প্রকল্পের কথা। পরের বছর থেকেই শুরু হতে চলেছে তাঁর এই প্রকল্প। ৫০০ দিনের প্রকল্পে সবমিলিয়ে তাঁর অতিক্রম করার কথা ৬৮৩৫ মাইল জলপথ। ঘুরে দেখবেন ১৩০টি দেশ। কঠিনতম এই চ্যালেঞ্জও তিনি সফলভাবে অতিক্রম করতে পারবেন কি? পারলে, ষষ্ঠবারের জন্য গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পাতায় আবার জায়গা করে নেবেন কিংবদন্তি স্লোভানিয়ান সাঁতারু…
আরও পড়ুন
প্রথম মহিলা সাঁতারু হিসাবে ৭ পদকজয় এমা ম্যাককিওনের
Powered by Froala Editor