যত্রতত্র ঘুমিয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা, জাগেন কয়েকদিন পর - রহস্যময় ‘ঘুম-গ্রামে’র কথা

কাজাকিস্তানের একটি অখ্যাত গ্রাম কালাচি। আলাদা করে বলার মতো কিছুই ছিল না এখানে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীদের নাজেহাল করে দিয়েছে এই গ্রাম। হঠাৎ দেখা যায় গ্রামবাসীরা যেখানে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ছে। শুধু ঘুমিয়েই পড়ছে না, অচৈতন্য অবস্থায় দুই দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত কাটিয়ে দিচ্ছে। ঘুম ভাঙলে শুরু হচ্ছে মাথাব্যথা। অনেকের স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। হাঁটাচলার ক্ষমতা থাকছে না বেশ কিছুদিন। প্রথম প্রথম চিকিৎসকরা বিষয়টা গুরুত্ব দেননি। কিন্তু ক্রমশ রোগটা ছড়িয়ে পড়তে থাকলে চিকিৎসক থেকে সরকার প্রত্যেকে নড়েচড়ে বসেন।

২০১০ সাল থেকে কালাচি গ্রামে এ-ধরনের ঘটনার কথা জানা যেতে থাকে। তারপর ক্রমশ রোগটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বর্তমানে গ্রামের মোট জনসংখ্যা ৬০০ মতো। তার মধ্যে ১৬০ জনের বেশি মানুষ অজানা এই রোগের শিকার। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অনেক এই গ্রামের নাম দিয়েছে ঘুম-গ্রাম বা ‘স্লিপি হলো’।

রোগের কারণ সম্পর্কে এখনও সঠিক কিছুই জানা যায়নি। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় রোগীদের ব্রেনে তরল পদার্থের পরিমাণ হঠাৎ ভীষণ বেড়ে যায়। কিন্তু কীসের প্রভাবে এরকম ঘটনা ঘটছে, সে-প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি। এই গ্রামের কাছেই আছে একটি পরিত্যক্ত ইউরেনিয়াম খনি। তার তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ থেকে নানারকম প্রভাব ছড়িয়ে থাকতে পারে। রুশ গবেষক লিওনিড রিখভানভ এই অজানা রোগের কারণ হিসাবে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণকেই সন্দেহ করেছেন। কাজাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকেও এই ইউরেনিয়াম খনিকেই দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু ব্রেনে তরল পদার্থের পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পিছনে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

তবে যাই হোক না কেন, যত্রতত্র ঘুমিয়ে পড়ার এই ঘটনাটা অবাক করার মতো। ইনসোমনিয়ায় ভোগা কোনো ব্যক্তি কালাচি গ্রামে হাজির হলে কি তাঁর রোগ সেরে যাবে? বিষে বিষক্ষয়? কে জানে!