ওজন কমপক্ষে ২০০ পাউন্ড। চেহারাও দানবিক। যেন সাক্ষাৎ যম। ক্ষিপ্রবেগেই ধেয়ে এসেছিল প্রতিবেশীর জার্মান শেফার্ড। তার গর্জনে চমকে গিয়েছিল আশেপাশের লোকজনও। তবে ভয় পায়নি যুক্তরাষ্ট্রের ওমিংয়ের বাসিন্দা ব্রিজার ওয়াকার। ভয় পেলেই বা চলবে কীভবে? তার সঙ্গে যে আছে ছোট্ট বোন। ক্রুদ্ধ এই প্রাণী যে ছিঁড়ে খাবে তাকে। তাই ছোট্ট বোনের ঢাল হয়েই শেফার্ডের সামনে দাঁড়িয়েছিল ব্রিজার। ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়ার পরেও হার মানেনি সে। বোনের গায়েও পড়তে দেয়নি এতটুকু আঁচড়।
ছোট্ট শিশুকন্যাটির বয়স তিন বছর। আর তার সাহসী দাদার? শুনে যা মনে হচ্ছে, একদমই তেমনটা নয়। কৈশোরেও পা দেয়নি ব্রিজার। তার বয়স ৬ বছর পেরোয়নি এখনও। তবুও অসীম সাহসিকতা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বোনের সুরক্ষায়। অসম যুদ্ধে দানবিক শ্বাপদটি কামড় বসিয়েছিল মুখে। উপড়ে এনেছিল মুখের একাংশ। ফলত ৯০টি সেলাই পড়ে ব্রিজারের গালে। তবে এত যন্ত্রণা সহ্য করেও তার বক্তব্য একই, ‘আজ যদি মরতেও হত তবে সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম আমি’।
গত জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিল নেটিজেনদের মধ্যে। খবরটা পৌঁছে গিয়েছিল সিনেমার পর্দার অ্যাভেঞ্জারদের কাছেও। আয়রনম্যান ওরফে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র থেকে শুরু করে ক্যাপটেন আমেরিকা ক্রিস ইভান সকলেই সম্মান জানিয়েছিলেন ক্ষুদে যোদ্ধাকে। বিশ শতকে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র বোনের জীবনরক্ষায় যে লড়ে ফেলেছে মধ্যযুগীয় গ্ল্যাডিয়েটর।
সম্প্রতি ব্রিজারকে সম্মান জানাল ওয়ার্ল্ড বক্সিং কাউন্সিল। একদিনের জন্য বিশ্বের হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হিসাবে তাঁরা ঘোষণা করল ব্রিজার ওয়াকারের নাম। সেইসঙ্গে তাঁর নামে চালু হল বক্সিংয়ের এক নতুন বিভাগ। এতদিন অবধি ২০০ পাউন্ড পর্যন্ত ক্রুসারওয়েট বিভাগ ও তার বেশি পাউন্ডের জন্য হেভিওয়েট বিভাগ চালু ছিল। তবে এবার নতুন সংযোজন হল ব্রিজারওয়েট বিভাগ। যেখানে অনূর্ধ্ব ২২৪ পাউন্ডের লড়াই হবে বক্সারদের মধ্যে। ভ্যাসিল লোমাচেঙ্কো, ক্যানেলো আলভারেজের মতো প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরাও স্বাগত জানিয়েছে বক্সিং কাউন্সিলের এই সিদ্ধান্তকে। অনুজের প্রতি দাদার যে দায়িত্ব, তাই যেন নতুন করে শিখিয়েছে ছোট্ট ব্রিজার। এই স্বীকৃতি তো তার প্রাপ্যই...
Powered by Froala Editor