মহাকর্ষ সূত্র ব্যাখ্যা করার সময়ে আরও অজস্র নোট লিখেছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। এবং সেই সূত্রের ভিতরেই লুকিয়ে ছিল পৃথিবীর শেষদিনের সন্ধান। স্যার আইজ্যাক ভবিষ্যৎবাণী করে গিয়েছিলেন, পৃথিবী ধ্বংস হবে ২০৬০ সালে!
১৭০৪ সালে পদার্থবিদ্যার প্রবাদপ্রতিম ধাত্রী পুরুষ লিখেছিলেন, রোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ঠিক ১২৬০ বছর পরে ধ্বংস হবে পৃথিবী। সেই হিসেবে ২০৬০ সালই হল সেই অন্তিমক্ষণ। নিউটনের নোট অনুসারে, ড্যানিয়েলের বাইবেল বিশ্লেষণ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র এর পিছনে ছিল, সেটা ৩০০ বছর পরেও এক গভীর রহস্য হয়েই থেকে গেছে। তার থেকেও বড়ো রহস্য, কী ভাবে আর্ল অফ পোর্টসমাউথের একটা ঘরে এই কাজটি সকলের চোখের আড়ালেই থেকে গিয়েছিল প্রায় ২৫০ বছর! এবং তাতে লেখা ছিল, "সময়টা পেছোতেও পারে; তবে এগিয়ে না আসারও কোনও কারণ দেখতে পাচ্ছি না।"
বস্তুত, নিজে পৃথিবীর শেষ সময় নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করলেও একটা সময় এই নিয়ে যে পরিমাণ গুজব এবং তত্ত্ব সামনে আসতে শুরু করেছিল, তাতে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিলেন তিনি। নিউটনের লেখা পড়েই বোঝা যায় সেই কথা। “আমি এটা লিখতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ পৃথিবীর ধ্বংস কাল নিশ্চিত করার জন্য আমার কোনো দায় নেই। কিন্তু যে সমস্ত চুনোপুঁটিরা দিনের পর দিন এই নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে যাচ্ছে, সেই বিরক্তিকর ব্যাপারটা বন্ধ করার জন্যই এটা নিয়ে বসতেই হল আমায়। এরা বুঝতেও পারছে না যে, যতবার এদের অনুমান ভুল হবে ততবার পরম পিতার অভিশাপ নেমে আসবে সারা বিশ্ববাসীর উপর।”
এছাড়াও নিউটনের নোটগুলিতে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্যও দেখতে পাওয়া যায়। একটি জায়গায় তিনি লিখেছেন যে, ‘দুষ্টু জাতি’ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইহুদিরা ‘বন্দি দশা’ থেকে তাদের স্বদেশ ইজরায়েলে ফিরে আসবে। ইহুদিদের সুদিন ফিরে পাওয়াকে তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার অবসান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
কিন্তু এই নোটগুলি কতখানি বিজ্ঞান এবং কতটা ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত ছিল সেই নিয়ে বিতর্কও রয়ে গেছে এখনও। জেরুজালেমের যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নোটগুলি প্রদর্শিত হয়েছিল, তার কিউরেটর ইয়িমিমা বেন-মেনাহেম বলেছিলেন যে, এই বিখ্যাত পদার্থবিদ বিজ্ঞানের দ্বারা নয়, বরং পরিচালিত ছিলেন ধর্মের দ্বারা। তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, এর ফলে প্রমাণিত হবে, পৃথিবীতে ঈশ্বরের কার্যকলাপ ব্যাখ্যা করার জন্যই বিষয় হিসেবে বিজ্ঞানের উৎপত্তি।
প্রসঙ্গত বলা যায় যে পৃথিবী কখন অথবা কীভাবে শেষ হবে সেই নিয়ে স্যার আইজ্যাক নিউটনের বরাবরই একটি অদম্য আকর্ষণ ছিল। ২০০৩ সালে একটি তথ্যচিত্রের বিষয়ও হয়ে ওঠে এটি, যার নাম ছিল ‘নিউটন: দ্য ডার্ক হেরেটিক’।
আরও পড়ুন
নিউটনের তৃতীয় সূত্রে রয়েছে সীমাবদ্ধতা, তাত্ত্বিক প্রমাণ দিলেন ভারতীয় গবেষক
প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ৪৫০০ পাতা জুড়ে একের পর এক সূত্র খাড়া করে নিউটন গণনা করতে চেয়েছিলেন এই পৃথিবীর শেষ দিন। কিন্তু ঠিক কোথায় পৌঁছতে চেয়ে ছিলেন তিনি, সেটা এই পৃথিবীর নানা অজানা রহস্যের মতোই অজানা থেকে গিয়েছে আজও। যদিও বিখ্যাত পদার্থবিদের ভবিষ্যৎবাণী উড়িয়ে দিয়ে বর্তমান বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০৬০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার কোনো কারণ অথবা যুক্তি কিছুই তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না।
Powered by Froala Editor