ব্যবহারের পর মাটিতে পুঁতে ফেলা যাবে এই 'পরিবেশবান্ধব' ব্যাটারি

দেখলে মনে হবে ছোট্ট সোপ পেপার। অথচ, অতিসাধারণ এই কাগজের টুকরোই আদতে শক্তির উৎস। হ্যাঁ, সম্প্রতি এমনই অভিনব ব্যাটারি তৈরি করে ফেললেন সিঙ্গাপুরের গবেষকরা। শুধু টেকসই এবং হালকাই নয়, এই ব্যাটারি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধবও। চলতি মাসে ‘অ্যাডভান্স সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র।

মূলত, সেলুলোজ কাগজের টুকরোর দুই প্রান্তে জিঙ্কের তৈরি ইলেকট্রোডের ব্যবহারেই এই অভিনব ব্যাটারি তৈরি করেছেন সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রযুক্তিবিদরা। যার শক্তির উৎস হাইড্রোজেল। এবং সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয় হল, এই ব্যাটারি উৎপাদন করা হয়েছে স্ক্রিন-প্রিন্টের মাধ্যমে! এ যেন ঠিক সায়েন্স-ফিকশন উপন্যাসেরই গল্প।

সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান জার্নালে গবেষণাপত্রটি জমা দেওয়ার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ৪ সেন্টিমিটার বাহুর একটি পেপার-ব্যাটারি ব্যবহার করেন সিঙ্গাপুরের গবেষকরা। স্ক্রিন-প্রিন্টেড ব্যাটারিটি ছোটো ইলেকট্রিক ফ্যানকে প্রায় ৪৫ মিনিট চালাতে সক্ষম হয়েছিল। পাশাপাশি আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক উঠে আসে সেই পরীক্ষায়। কাগজের টুকরোটিকে ভাঁজ করলে, কিংবা তাকে কেটে ছোটো করে ফেলা হলেও, বিদ্যুৎপ্রবাহে কোনোরকম বাধা সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ, কোনোরকম বাহ্যিক পরিবর্তনই নষ্ট করতে পারবে না এই ব্যাটারিকে। 

ব্যাটারিটি মূল উপাদান জৈব পদার্থ হওয়ায়, ব্যবহারের পর তা অনায়াসেই পুঁতে ফেলা যাবে মাটিতে। মাত্র একমাসের মধ্যেই তা পরিবেশে সম্পূর্ণভাবে বিয়োজিত হয়ে যাবে বলেই দাবি গবেষকদের। সাধারণ ব্যাটারিতে অ্যাসিড এবং বিভিন্ন ধরনের ধাতব আয়ন ব্যবহৃত হওয়ায়, তা ভয়ঙ্করভাবে মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়। সেই সমস্যাকেও কমিয়ে আনবে এই ব্যাটারি। এমনটাই দাবি করছেন গবেষকরা। পাশাপাশি এই ব্যাটারি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ীও। 

আয়তনের ছোটো এবং নমনীয় হওয়ায় আগামী দিনে স্মার্ট ফোন, ক্যালকুলেটর, বায়োমেডিক্যাল সেন্সারের মতো একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেটে ব্যবহার করা যেতে পারে এই ব্যাটারি। এই নতুন শক্তিশেলই যে চিরাচরিত প্রযুক্তির দুনিয়ায় বড়োসড় বদল আনবে, তাতে সন্দেহ নেই কোনো…

Powered by Froala Editor