সুসময়ের স্মৃতি তবু মুছে যেতে পারে একদিন, কিন্তু দুঃসময়ের কথা কি ভুলে থাকা যায়? আর সেটা যদি হয় করোনা পরিস্থিতি, তাহলে তার সাক্ষী তো সারা পৃথিবী। ভারতবর্ষে অবশ্য সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী শিথিল হয়েছে লকডাউন। ১ জুন থেকে শুরু হয়েছে আনলক ১। আর এই সময় তাই বারবার স্মৃতিতে ঘুরেফিরে আসছে দুমাসের বেশি সময় ধরে চলা লকডাউনের নানা করুণ দৃশ্য।
লকডাউনের স্মৃতিতে করোনা সংক্রমণ এবং চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের স্মৃতি তো আছেই। সেইসঙ্গে আছে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার স্মৃতি। হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় কাজ হারান বহু মানুষ। আর রাতারাতি তাঁরা ঘরে ফিরে যেতেও পারেননি। অন্য জায়গায় কখনো অনাহারে কখনো অর্ধাহারে দিন কাটিয়ে কোনোরকমে বেঁচে ছিলেন কেউ কেউ। সবাই অবশ্য সেই সুযোগ পাননি। অনেক পরিযায়ী শ্রমিক এই দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। আর পরিসংখ্যান বলছে এই সময়ে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাটা প্রায় ২০০-র কাছাকাছি।
চার দফার লকডাউনে প্রথম দুই দফায় শ্রমিকরা তাও কোনোভাবে থাকার মতো ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু তৃতীয় দফার লকডাউনের ঘোষণার পর তাঁরা আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারেননি। একদিকে শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক কার্যক্রম, অন্যদিকে অনেকেই পায়ে হেঁটে রওয়ানা হয়েছিলেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়েই শ্রমিক মৃত্যুর হার সবথেকে বেশি। অন্তত ১১৮ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন এই সময়কালে। আর চারটি দফা মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা মোটামুটি ১৯৮।
'সেভ লাইফ' ফাউন্ডেশনের সমীক্ষায় আরও জানা গিয়েছে, পথদুর্ঘটনায় শ্রমিক মৃত্যুতে প্রথম পাঁচটি রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ, বিহার, তেলেঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্র। এছাড়াও অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই সময়কালে পথদূর্ঘটনায় মৃত মানুষের ২৭ শতাংশই পরিযায়ী শ্রমিক। যেখানে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং অন্যান্য ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের মৃত্যুর ভাগ মাত্র ৫ শতাংশ। দেশের অন্যান্য দুর্যোগের মতোই এবারেও আক্রমণের প্রথম ধাক্কা এসে পড়েছিল দিন আনি দিন খাই মানুষদের উপর। ভাইরাস হয়তো সেই বিচার করেনি, কিন্তু লকডাউন পর্যায়ের বেহাল অর্থনীতির কোপ তো তাঁদের উপরেই এসে পড়া স্বাভাবিক। তবে আগামী বিপদের দিনে হয়তো আমরা আরও ভালোভাবে একসঙ্গে লড়াই করতে শিখব, এটুকুই আশা করা যায়।
Powered by Froala Editor