মাত্র ৩ বছর বয়সে তাঁকে কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় পড়াশুনার জন্য। কিন্তু যত বয়স বাড়ল, শিকড়ের টান অনুভব করলেন ততই। কোনোভাবে যদি ফিরে যাওয়া যায় নিজের গ্রামে! সুযোগও এল। এমনই এক সুযোগ, যা তাঁকে জন্মভূমিতে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি করে তুলল অনেকের আদর্শও। হ্যাঁ, শিখা মান্ডির কথাই বলছি।
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি গ্রামে জন্ম শিখার। তাঁর মাতৃভাষা সাঁওতালি। তিনিই একজন উল্লেখযোগ্য রেডিও জকি। সারা ভারতে ৪২ লক্ষ মানুষ যে ভাষায় কথা বলেন, সেই ভাষায় প্রত্যেকদিন রেডিওতে অনুষ্ঠান করেন শিখা।
‘জহার ঝাড়গ্রাম’। এটিই নাম শিখার অনুষ্ঠানে। সোম থেকে শনিবার বিকেল ৪টে থেকে ৬টা অব্দি শুনতে পাবেন শিখার কণ্ঠ। ‘রেডিও মিলন ৯০.৪’ চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয় এটি। মূলত খড়গপুর ও ঝাড়গ্রাম অঞ্চলেই এই অনুষ্ঠানের লাইভ হয়। পরে অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ শুনতে পারেন তা।
বিশুদ্ধা সাঁওতালি ভাষায় পুরো অনুষ্ঠানটি করেন শিখা। প্রথমে তাঁর অনুষ্ঠানের সময়সীমা ছিল ১ ঘণ্টা। জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীকালে কর্মকর্তারা সময় বাড়িয়ে ২ ঘণ্টা করেন। শুধু রেডিওতেই নয়, সরাসরি গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন শিখা, তাঁদের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-দুর্দশার কথা শোনেন। তারপর, রেডিও-র মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেন সর্বত্র।
রেডিও জকি হওয়া অনেকেরই স্বপ্ন। এই পেশায় অনেকে সফল হয়েছেন, অনেকেই হননি। কিন্তু আজকের দিনে, যেখানে বিভিন্ন চ্যানেলের সঞ্চালকদের কণ্ঠে বাংলার সঙ্গে অবলীলায় মিশে যাচ্ছে ইংরাজি হিন্দি ও অন্যান্য শব্দ, সেখানে প্রান্তিক একটি ভাষা সাঁওতালিকে রেডিও-য় তুলে আনছেন শিখা। এও এক মাতৃভাষার লড়াই। শিখাকে স্যালুট।