সমাপ্তির পথে পুরুষদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ (Cricket World Cup)। একমাসের বেশি সময় ধরে ভারতের বিভিন্ন মাঠে হাজার হাজার মানুষের মন জয়ের পর বেজে উঠল বিদায়ের বাজনা। আর মাত্র কয়েক দিন। তারপরই জানা যাবে কার হাতে উঠবে বিশ্বকাপ ট্রফি? শুরুতে উন্মাদনা একটু কম-কম ঠেকলেও স্লগ ওভারে এসে ঠিক পৌঁছে গেছে সঠিক লক্ষ্যে। চালিয়ে খেলে বাড়িয়ে নিয়েছে মানুষের আবেগের স্ট্রাইক রেট। তার সঙ্গে উপহার দিয়েছে কিছু দুর্দান্ত মুহূর্ত। বিরাট কোহলির ৪৯তম সেঞ্চুরি, আফগানিস্তানের লড়াই কিংবা এক পায়ে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সেই মহাকাব্যিক ইনিংস। আবার, বিতর্কও কম হয়নি এই বিশ্বকাপে। তা সে টিকিটের কালোবাজারি নিয়ে হোক, কিংবা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের ‘টাইমড আউট’ নিয়ে। বহু স্মৃতির ঝুলি ভর্তি করে আবার সেই চার বছরের অপেক্ষা।
প্রতি বিশ্বকাপেই আয়োজক দেশগুলি চায় নিজস্ব সংস্কৃতিকে সকলের সামনে তুলে ধরতে। বিশ্বকাপের লোগো, ‘থিম সং’ সব কিছুর মধ্যেই থাকে দেশীয় ঐতিহ্যের প্রমাণ। সেই দিক থেকে কিছুটা হতাশই হয়েছে ভারতের ক্রিকেটপ্রেমী জনতা। গান বা প্রতীক, কোনোটাই সেভাবে মন ছুঁয়ে যেতে পারেনি। তবে নজর কেড়েছে অন্য একটি বিষয়। খেলা দেখার সময় নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন কয়েকটি আশ্চর্য চিহ্ন। স্কোরবোর্ডে হোক বা স্টেডিয়ামে, বারবার দেখানো হচ্ছে ন’টি চিহ্নকে। প্রত্যেকটি রূপ আর রং আলাদা। তার সঙ্গে কিন্তু ভিন্ন অর্থও বোঝায় সেগুলি। যাদের বলা হচ্ছে 'নবরস' (Navarasa)। কী সেই অর্থ? আর এই চিহ্ন ব্যবহারের কারণটাই বা কী?
কথায় বলে, ক্রিকেট এক বলের খেলা। মুহূর্তের মধ্যে বদলে যেতে পারে ম্যাচের রং। চূড়ান্ত হতাশা থেকে জয়ের আনন্দে চিৎকার করে উঠতে পারে একজন সমর্থক। এই আবেগের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে ‘নবরস’। যেখানে ন’টি চিহ্ন প্রকাশ করে খেলা চলাকালীন মানুষের অনুভূতিকে। এক এক করে চিনে নেওয়া যাক প্রতিটি চিহ্ন আর তাদের অর্থকে।
আনন্দ (Joy) : নিচে গোলাপি রং, উপর থেকে নেমে এসেছে নীল ত্রিভুজ। যার মাঝে আবার একটি গোলাপি বলয়। এটিকে বলা হচ্ছে আনন্দের চিহ্ন। প্রিয় দলের জয়ের আনন্দ কিংবা প্রিয় খেলোয়াড়ের শতরানের মুহূর্তের সময়ে দর্শকের অনুভূতি প্রকাশ করে এই চিহ্ন।
আরও পড়ুন
পুরুষ নয়, প্রথম চালু হয়েছিল মহিলাদের ক্রিকেট বিশ্বকাপ
আরও পড়ুন
ভারত-পাকিস্তান দুই দলের হয়ে খেলা তিন ক্রিকেটার
শক্তি (Power): হালকা নীল রংয়ের উপরে গাঢ় নীল চক্র। মাঝে একটি বলয়। দেখে মনে পড়তে পারে কৃষ্ণের সুদর্শন চক্রের কথা। আসলে এটি খেলোয়াড়ের শক্তির চিহ্ন। চার বা ছয় মারার সঙ্গে টেকনিকের সঙ্গে পেশীশক্তির গুরুত্ব বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এটি।
শ্রদ্ধা (Respect) : গাঢ় নীল রংয়ের উপর হলুদ রংয়ের দুটি হাত যেন নমস্কার জানাচ্ছে। ক্রিকেটারদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মান লুকিয়ে আছে এই চিহ্নের মধ্যে। দেশের জার্সিতে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া একজন খেলোয়াড়কে তো সম্মান জানাতেই হয়। তা সে বিপক্ষ দলের হলেও। একই সঙ্গে আবেদন জানাচ্ছে বিপক্ষ দলের সমর্থকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের।
গর্ব (Pride) : গোলাপি রংয়ের উপর যেন মেলে বসেছে ময়ূরের ডানা। কিংবা বলা যায় নীল রংয়ের ফুল। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দেশবাসীর মনে যে গর্বের অনুভূতি তৈরি হয়, তারই প্রকাশ এই চিহ্নটি।
সাহস (Bravery) : লাল আর হলুদের মিশ্রণ এই চিহ্নটিতে। হঠাৎ দেখে মনে হতে পারে বর্শার ফলা। যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন সাহস প্রয়োজন, বিশ্বকাপই বা তার চেয়ে কম কোথায়? শারীরিক চোট উপেক্ষা করে মাটি কামড়ে মাঠে পড়ে থাকার জন্য যে সাহস আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দরকার, এই চিহ্ন বলছে তার কথা। ম্যাক্সওয়েলের খেলা দেখার পর নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে এর গুরুত্ব।
গৌরব (Glory) : যে দশটি দল বিশ্বকাপে খেলছে, তাদের মধ্যে একটি দল পৌঁছে যাবে চূড়ান্ত গৌরবের কাছে। আর তার জন্যই এত প্রস্তুতি, এত লড়াই। গোলাপির উপর নীল তারার এই চিহ্নটি নির্দেশ করছে সেই বিশেষ মুহূর্তটির দিকে।
বিস্ময় (Wonder) : ক্রিকেটকে বলা হয় অঘটনের খেলা। কখন যে কীভাবে ম্যাচ ঘুরে যাবে, তা কেউই আন্দাজ করতে পারবে না আগে থেকে। লাল-হলুদ এই চিহ্নটি যেন সেই বিস্ময়ের প্রকাশ। যদিও এবারের বিশ্বকাপে এরকম আশ্চর্য মুহূর্ত তুলনায় অনেক কম।
আবেগ (Passion) : প্রতিটি খেলার সঙ্গেই জড়িয়ে থাকে আবেগ। বিশেষ করে তা যদি দেশকে উপস্থাপন করে। বেগুনি রংয়ের উপর নীল জলের বিন্দু দিয়ে তৈরি চিহ্নটিকে দেখা হচ্ছে আবেগের বিস্ফোরণ হিসেবে।
হতাশা (Anguish) : খেলায় হারজিত থাকেই। জয়ের আনন্দে যখন একদল আত্মহারা, তখন অন্যদলটি নীরবে দাঁড়িয়ে আছে মাঠের এক কোণে। সমর্থকরাও ভেঙে পড়েছেন হতাশায়। এই দৃশ্যটি একেবারেই অচেনা হয়। নীল ও গোলাপি পদ্মের ছবিতে ধরতে চাওয়া হয়েছে সেই রূপটিকেই।
আর কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরেই দেখা যাবে কোন দলের জন্য বরাদ্দ থাকে ‘গৌরব’, আর কোন দলই বা মাঠ ছাড়ে ‘হতাশা’ নিয়ে?
Powered by Froala Editor