বর্ণবিদ্বেষ, সামাজিক হেনস্থা ও এক 'কৃষ্ণকলি'র কাহিনি

‘কালো কাজল’-এর গল্পটা শেষ করেছে কৃষ্ণকলির ভাই। ঠিক এই সময় ছেলেকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছে কৃষ্ণকলি। কথায় কথায় উঠে আসে সেই ছেলের বিয়ের প্রসঙ্গও। পুত্রবধূ হিসাবে কেমন মেয়ে পছন্দ কৃষ্ণকলির? “আহামরি কিছু নয়। তবে মেয়ে যেন ফরসা হয়!” এখান থেকেই গল্প শুরু ‘কৃষ্ণকলি’-র। পরিচালক সৌভিক চট্টোপাধ্যায়ের এই শর্ট ফিল্ম নানা ইতিমধ্যে বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসা পেয়েছে। পুরস্কারও পেয়েছে। আর এর মধ্যেই হয়ে গেল ছবিটির প্রথম অনলাইন প্রদর্শনী।

গত ১৭-১৯ সেপ্টেম্বর এসসি কালারসের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হল ‘কৃষ্ণকলি’। নিয়ম মেনে টিকিট কেটে সিনেমাটি দেখলেন দর্শকরা। মাত্র ২০ মিনিটের সিনেমা। তার মধ্যেই ফুতে উঠেছে সমকালীন বাস্তবতার ছবি। এই গল্প ‘কৃষ্ণকলি’-র গল্প। যাঁর গায়ের রঙের জন্য বহু ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে ছোটো থেকেই। গল্পের সূত্রেই ফিরে যেতে হয় ২০১৭ সালের একটি ঘটনার কাছে। ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মমতা দিগর আত্মহত্যা করেছিল শুধু তার গায়ের রং নিয়ে বিদ্রুপ সহ্য করতে না পেরে। একের পর এক পাত্রপক্ষ বিদায় নিয়েছে শুধু মেয়ে কালো বলে। সামাজিক বিদ্রুপের বোঝায় জর্জরিত মমতার পরিবার। সেই আত্মঘাতী কিশোরীর প্রতিই উৎসর্গ করা এই সিনেমা।

কবি, সুরকার ও শিল্পী শ্রী শ্যামল চট্টোপাধ্যায় এর লেখা কবিতা ‘কালো কাজল’ অবলম্বনে তাঁরই লেখা গল্প থেকে নির্মিত এই ছবি। ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি সম্পাদনা, সঙ্গীত ও নানাবিধ দায়িত্ব পালন করেছেন পরিচালক একাই। রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, মোহিনী চৌধুরীর গানের সঙ্গে সুন্দরভাবে শ্যামল চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর নিজের লেখা ও সুরারোপিত দুটি গান মিশিয়ে দিয়েছেন সৌভিক। এছাড়াও কৃষ্ণকলির তিনটি বয়সের চরিত্র সৌশ্রী দাস, ঋতুস্মিতা চৌধুরী এবং শিবানী মাইতির অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এই সিনেমা বাস্তবতা। যেখানে সামাজিক বৈষম্যের শিকার কৃষ্ণকলির মনের মধ্যেও বেড়ে উঠেছে সেই একই বৈষম্যের বীজ। এই সিনেমা আমাদের বুঝিয়ে দেয়, বর্ণবিদ্বেষ আমাদের সমাজে আজও কতটা প্রাসঙ্গিক।

মাত্র ৩ দিনের প্রদর্শনীতে অনেকেই সিনেমাটি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাই দর্শকদের সুবিধার কথা ভেবে আগামী ১১-১৫ অক্টোবর, দুর্গাপুজোর মধ্যেই আবারও সিনেমাটি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে এসসি কালারস। কোনোরকম ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ভরসায় না থেকে প্রযোজকের নিজের উদ্যোগেই এমন সম্প্রচার, স্বল্প বাজেটের সিনেমার জন্য এও এক অভিনব উদ্যোগ তাতে সন্দেহ নেই।

Powered by Froala Editor