“সারাদিন ধরে সন্দেশখালি আর ভাঙা তুষখালি ঘুরলাম আমরা। এই দুই গ্রাম মিলিয়েই ‘অমানুষ’ সিনেমার যাবতীয় শুটিং হয়েছিল। তার নানা নমুনা এখনও ছড়িয়ে রয়েছে। তবে যত্নে রাখা আছে মাত্র দুটি নমুনা। যে বাংলোটিতে উত্তমকুমার থাকতেন, এবং সিনেমায় দেখতে পাওয়া লঞ্চটি।” বলছিলেন ফেসবুক গ্রুপ ‘উত্তমকুমার ও স্বর্ণযুগ’-এর কর্ণধার কল্লোল চক্রবর্তী। সামাজিক মাধ্যমের ভার্চুয়াল জগত থেকে বেরিয়ে তাঁরা হেঁটে দেখতে চেয়েছেন উত্তমকুমারের (Uttamkumar) বিভিন্ন সিনেমার শুটিং স্পটগুলি (Shooting Spots)। বছর দুয়েক আগে ধন্যি মেয়ের শুটিং স্পট ঘুরে আসার পর এবার বেরিয়ে পড়েছিলেন ‘অমানুষ’ (Amanush) অভিযানে।
২ জানুয়ারি কলকাতার সায়েন্স সিটি থেকে বাসে করে রওয়ানা হন তাঁরা। গ্রুপের প্রায় ৫০ জন সদস্য ছিলেন এবারের অভিযানে। কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিজিৎ ভট্টাচার্য এবং পরিতোষ মাহাতোর তত্ত্বাবধানে প্রথমেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন ভাঙা তুষখালিতে। সেখানে বনবিবির মন্দির থেকে শুরু হয় মূল যাত্রা। “এই বনবিবির মন্দিরটিও দেখা গিয়েছিল সিনেমায়। তবে আটচালার যে মন্দিরটা সিনেমায় দেখেছি, তার সঙ্গে বর্তমান ছবিটা মেলাতে বেশ কষ্টই হচ্ছিল। গ্রামবাসীরা নিজেদের মতো করে রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এছাড়া কোনো উদ্যোগ তো নেই।” বলছিলেন কল্লোলবাবু। তিনি জানালেন, সিনেমায় উত্তমকুমারকে যে কাঠের বাড়িটিতে থাকতে দেখা গিয়েছিল, সেটি একেবারেই ভেঙে গিয়েছে। সময়ের নিয়মে একটু একটু করে তা ভেঙে পড়ছিলই। আমফানে এসে পুরোটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। তবে গ্রামে কাঠের বাড়ি রয়েছে প্রচুর। সেই বাড়িগুলি দেখেও মনের মধ্যে সিনেমার স্মৃতি জেগে ওঠে।
আরও পড়ুন
ঘুরতে-ঘুরতেই পৌঁছে যাওয়া উত্তমকুমারের সিনেমার শুটিং স্পটে, নেপথ্যে ফেসবুক গ্রুপ
ভাঙা তুষখালিতেই রয়েছে সেই পুকুরপাড়টিও, যেখানে ‘যদি হই চোরকাঁটা’ গানের সঙ্গে উত্তমকুমার ও শর্মিলা ঠাকুরের প্রেমের দৃশ্য আজও প্রত্যেক বাঙালির মনের মণিকোঠায় রয়ে গিয়েছে। পুকুরটিরও তেমন পরিচর্যা হয় না আজকাল। ভাঙা তুষখালি থেকে সন্দেশখালি পৌঁছালে কিন্তু দৃশ্যটা খানিকটা বদলে যায়। সন্দেশখালি এখন আর ৪০ বছর আগের গ্রাম নেই। তার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। আর এখানে বিভিন্ন জায়গাগুলির রক্ষণাবেক্ষণও হয়েছে অনেকটা ভালোভাবে। তবে সিনেমার খুব কম দৃশ্যের শুটিংই হয়েছে সন্দেশখালিতে। তাছাড়া বিভিন্ন নমুনাগুলি সংরক্ষণ করা হলেও সিনেমার সময়ের দৃশ্যপট যে হারিয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন
প্রমথেশ বড়ুয়াই প্রকৃত ‘দেবদাস’, অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন উত্তমকুমার
আরও পড়ুন
‘সৌমিত্র নয়, আমার আসল প্রতিদ্বন্দ্বী কালী বন্দ্যোপাধ্যায়’, বলেছিলেন উত্তমকুমার
এতকিছুর মধ্যেও অক্ষত রয়েছে সিনেমায় উত্তমকুমারের ব্যবহার করা লঞ্চটি। সেটি এখন জলপুলিশের মালিকানাধীন। আর দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজ্য পিডব্লিউডি-র পুরনো বাংলোটি। সিনেমার গোটা ইউনিট কলকাতা থেকে যাতায়াত করলেও উত্তমকুমার নিজে থেকে যেতেন এই বাংলোতেই। সকালে সিনেমার শুটিং-এর পর বিকাল থেকে চলত গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মেলামেশা, আড্ডা। এখনও গ্রামবাসীদের অনেকের মনে আছে সেই স্মৃতি। সেইসব স্মৃতিতে হাত বোলাতে বোলাতেই বিকেল হয়ে যায়। নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য। এমনই এক সূর্যাস্তের দৃশ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘অমানুষ’। সারাদিনের যাত্রার শেষে প্রাপ্তি বলতে এসবই। মহানায়কের নস্টালজিয়াকে জীবনের সঙ্গী করে নেওয়া, আর সেইসঙ্গে তাঁর স্মৃতি আঁকড়ে থাকা জায়গাগুলির কথা মানুষকে জানানো। সুন্দরবনে তো অনেকেই ঘুরতে যান। কিন্তু সেখানে উত্তমকুমারের স্মৃতি কতজন খোঁজেন?
Powered by Froala Editor