শেষ মুহূর্তের বায়নায় হিমশিম খাচ্ছে বর্ধমানের 'শোলা শিল্পগ্রাম'

“বায়না এবছর খুব কম পাইনি আমরা। কিন্তু সময়ের সমস্যাটাই বড়ো হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” পুজোর ব্যস্ততার মধ্যে এমন কথাই বলছিলেন পূর্ব বর্ধমানের ‘শোলা শিল্পগ্রাম’ বনকাপাশির শিল্পী কাশীনাথ পাল। বস্তুত এবছর দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সমস্ত শিল্পীরই সমস্যা একইরকম। গতবছর দুর্গাপুজো হবে কিনা, তাই নিয়েই ছিল জটিলতা। শেষ পর্যন্ত পুজো হলেও প্রায় সমস্ত ক্লাব-প্যান্ডেলেই ছোটো প্রতিমার পুজো হয়েছে। তবে এবছর আবারও বড়ো প্রতিমার দিকেই ঝুঁকছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় সময়টাই যে আর নেই।

আর মাত্র দিন দশেকের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে দুর্গাপুজো। শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। তবে এখনও পর্যন্ত ৭০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ করা বাকি। কাশীনাথ জানালেন, “অন্যান্য বছর দুর্গাপুজোর জন্য বায়না পেতে শুরু করি মোটামুটি রথযাত্রার সময় থেকে। এবছর জন্মাষ্টমীর আগে পর্যন্ত কোনো বায়নাই পাইনি।” শুধু তাই নয়, কলকাতার জুবিলি ক্লাবের মতো পুজোর বায়না যেখানে অন্যান্য বছর বৈশাখ মাসের আগেই চলে আসে, এবছর সেখানে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বায়না এসেছে। তবে বনকাপাশি গ্রামে কাজের জন্য শিল্পীর অভাব নেই। মোটামুটি ২ হাজার জনসংখ্যা এই গ্রামে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশ পরিবারই শোলার কাজের সঙ্গে যুক্ত। সবাই মিলে শেষ মুহূর্তে চাহিদা মেটানো যাবে বলে আশাবাদী শিল্পীরা। আর সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এখন রাত জেগে চলছে ডাকের সাজ তৈরি।

একসময় দুর্গাপ্রতিমার সাজ মানেই ছিল ডাকের সাজ। কিন্তু এখন সেই চাহিদা যেন ক্রমশ কমছে। ঐতিহ্যের বদলে এসে পড়ছে নানা আধুনিক বিকল্প। তার সঙ্গে কাঁচামালের অভাবও বিস্তর। কাশীনাথ পাল বলছিলেন, “এবছর এখনও শোলা-কাঠি হাতে পাইনি আমরা। গতবছর অর্ডার না আসায় অনেক মাল বেঁচে গিয়েছিল। তাই দিয়েই কাজ চলছে।” আর তা হবে নাই বা কেন? শোলার মূল যোগান তো আসে দুই মেদিনীপুর থেকে। ইয়াসের তাণ্ডবে সেখানে বহু নলবনই যে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে কাগজ, জরি, চুমকির মতো কাঁচামালের দাম। অথচ করোনা জনিত অর্থনৈতিক মন্দা এখনও গ্রাস করে রেখেছে বাজারকে। ফলে বায়না থাকলেও উপযুক্ত দাম পাচ্ছেন না শিল্পীরা।

এদিকে রাজ্যের মধ্যে পুজোর প্রস্তুতি চললেও ভিনরাজ্যে দুর্গাপুজোর সম্ভাবনা এখনও অনিশ্চিত। ফলে দিল্লি, মুম্বাই, পন্ডিচেরি থেকে যে সমস্ত অর্ডার আসত; তার এক তৃতীয়াংশও আসেনি এবছর। দুর্গাপুজো ছাড়াও শিল্পীদের কাছে আরেক বড়ো উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। চন্দননগরের ক্লাবগুলি থেকে প্রতি বছর মোটামুটি জানুয়ারি মাস নাগাদ বায়না এসে যায় বলেই জানালেন কাশীনাথ। অথচ এবছর এখনও পর্যন্ত বায়না আসেনি। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি গতবছরের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও সংশয় এখনও থেকেই গিয়েছে। এইসমস্ত জটিলতার মধ্যেই বেঁচে থাক দুর্গাপুজোর আয়োজন। দুর্গাপুজোকে ঘিরেই যে বহু মানুষের সারা বছরের উপার্জন নির্ভর করে থাকে। বেঁচে থাকুন সেইসমস্ত শিল্পীরাও। নাহলে গ্রামবাংলার এইসব শিল্প ঐতিহ্যই হারিয়ে যাবে।

Powered by Froala Editor