সিমলার বিখ্যাত মল রোড। তারই এক কোণে জীর্ণকায় একটি দোকান। ফ্যাকাশে নীল দরজা। মাথার ওপর ঝুলে থাকা বোর্ডে লেখা 'মারিয়া ব্রাদার্স'। বাইরের মেঘ-রোদ্দুরের আলো-আঁধার বিরাজমান ভেতরেও। মাত্র তিনটি ফিলামেন্ট বাল্ব, আর জানলা দিয়ে যতটুকু আলো ঢোকে। দেখে বোঝার উপায় নেই এই দোকানের অভিনবত্ব। অথচ টিনের তৈরি থরে থরে সাজানো দেরাজ খুললেই যেন ম্যাজিক খেলে যাবে। বেরিয়ে আসবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের প্রাচীন প্রিন্ট, ফটোগ্রাফ, মানচিত্র, শিল্পকলা এবং বইয়ের দুর্লভ সংগ্রহরা। শিমলার সেই আইকনিক অ্যান্টিকোয়ারিয়ান দোকানই বন্ধ হতে চলেছে এবার।
তখন দেশভাগের ঘনঘটা ভারতে। ১৯৪৬ সালে পাকিস্তান থেকেই ভারতে চলে এসেছিলেন ওসি সুদ। জীবন নির্বাহের জন্যই শুরু করলেন অ্যান্টিক বইয়ের ব্যবসা। লাহোরের ফর্ম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। নিজে একজন দক্ষ ভূগোলবিশারদ। কাজেই বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্প-সংস্কৃতি-পুঁথি সংগ্রহের আগ্রহ তো ছিলই।
দোকানে সংরক্ষিত সবথেকে পুরনো বইটি ১৫৫২ সালের। ভারতের ওপরে প্যারিস থেকে প্রকাশিত একটি বুকলেট। রয়েছে ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও। সব মিলিয়ে এমন দুর্মূল্য বইয়ের সংখ্যা ৪ থেকে ৫ হাজার। তাছাড়াও তৈলচিত্র, বিরল পুরাকীর্তি, বাদ্যযন্ত্র এসবেরও সংগ্রহ রয়েছে বিপুল। তবে তা বিক্রির জন্য নয়, শুধুই দেখার। যেন বড়ো কোনো মিউজিয়ামেরই এক প্রিমিটিভ সংস্করণ।
কিন্তু এই একুশ শতকে এসে মানুষের মধ্যে কমে যাচ্ছে বই পড়ার প্রবণতা। যেটুকু চাহিদা ছিল, তাও কেড়ে নিয়েছে অনলাইন বইবিপণীগুলি। অন্যদিকে নিভু নিভু পুরাসংগ্রহের নেশা এবং অভ্যাসও। কাজেই দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকছিল ব্যবসা। আর কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দিয়েছে করোনা আবহ। উপায়ান্তর না দেখেই তাই দোকান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
দোকানের কর্ণধার রাজীব সুদ জানান, সম্প্রতি সম্পূর্ণভাবেই বন্ধ রাখা হয়েছে সংগ্রহের কাজ। পরিকল্পনা রয়েছে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে বিক্রির চেষ্টা করা পূর্ববর্তী সংগ্রহগুলির। তবে প্রতিটি সংগ্রহের উপযুক্ত তথ্য এবং ছবি দিয়ে তা বাস্তবায়িত করা যথেষ্ট শ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। স্বল্প কিছু মানুষের হলেও চাহিদা মেটাবে 'মারিয়া ব্রাদার্স'। কিন্তু সিমলার সেই ঐতিহ্য, যার টানে ছুটে আসতেন এডমন্ড হিলারি থেকে ভুট্টো? তা তো হারিয়েই গেল চিরতরে। সিমলাও হারাল তার অন্যতম এক ল্যান্ডমার্ককে...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
অসংখ্য দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পসরা সাজিয়ে পাঠকের অপেক্ষায় গড়িয়াহাটের তাপস কয়াল