করোনা রোগীদের বিনামূল্যে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন শিলিগুড়ির প্রথম মহিলা টোটোচালক

এই জীবন তাঁকে অনেক লড়াইয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত করে তুলেছে। তাই যেন মহামারী করোনা পরিস্থিতিতেও ভয় পাননি মুনমুন সরকার। বরং অকাতরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পেরেছেন ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত মানুষদের দিকে। এই যুদ্ধে শামিল চিকিৎসক, নার্স অথবা স্বাস্থ্যকর্মীদের মতোই তিনিও একজন ফ্রন্টলাইন ওয়ারিয়র। এতদিন তাঁকে সবাই চিনতেন শিলিগুড়ি শহরের প্রথম মহিলা টোটোচালক হিসাবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি আরেক পরিচয় এনে দিল তাঁকে।

৪৮ বছরের মুনমুন সরকার অন্যান্য টোটো চালকদের মতোই লকডাউনের ফলে রোজগারের সমস্ত সুযোগ হারিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ স্বাভাবিক হতে শুরু করলে অর্থ রোজগারের চেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রয়োজন মনে করলেন। তিনি দেখেছেন কীভাবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রায় অচ্ছুত করে রেখে দেওয়া হচ্ছে সমাজে। এমনকি হাসপাতাল অবধি যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা। আর সেইসব মানুষদের জন্যই এগিয়ে এলেন মুনমুন সরকার। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কারের শিকার হতে হয়েছে তাঁকেও। তবুও লড়াই ছাড়েননি তিনি।

মুনমুন জানিয়েছেন, করোনা রোগীদের পরিবহন করেন বলে অনেক সুস্থ মানুষই তাঁর টোটোতে চাপতে চান না। এতে তাঁকে লোকসানের মুখেও পড়তে হয়েছে। যদিও তিনি নিজে প্রত্যেক রোগীকে পরিবহনের পর তাঁর বাহনটিকে স্যানিটাইজ করেন। অন্য সময়েও দৈনিক দুবার করে স্যানিটাইজ করেন টোটো। এই পর্যন্ত অন্তত ১০০ রোগীকে পরিবহন করেছেন তিনি। আর তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর মাসিক আয় প্রায় ২০০০ টাকা কমে গেলেও পিছিয়ে আসেননি তিনি।

করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইতে মুনমুন পাশে পেয়েছেন তাঁর স্বামী আনন্দকে। দুজনের এখন ঘর আলাদা। বলা যায় না, তাঁর শরীর থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তারপরেও স্ত্রীকে পিছিয়ে আসতে বলেননি আনন্দ। আসলে এই লড়াই তো সমাজের একধরনের কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানসিকতার বিরুদ্ধেই। যে মানসিকতার বিরুদ্ধে মুনমুনকে লড়তে হয়েছে আগেও। যখন তিনি মহিলা হয়ে টোটো চালাতে শুরু করেছিলেন। সেই থেকে আগল ভাঙার শুরু। এখন রোজ পিপিই কিট পরে, পুরো গাড়ি স্যানিটাইজ করে সেই লড়াইকেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন শক্ত হাতে।

Powered by Froala Editor