করোনাভাইরাস মহামারী সম্পূর্ণভাবেই বদলে দিয়েছে আমাদের জীবন। কোভিডের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই স্থবির হয়ে গিয়েছিল বিশ্বের সমস্ত দেশ। লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অধিকাংশ কল-কারখানা। ব্লু-কলারদের কাছেও ওয়ার্ক ফ্রম হোম হয়ে উঠেছিল অফিসের বিকল্প। তাতে কার্বন নির্গমনের মাণ কমেছিল অনেকটাই। কমেছিল দূষণও। কিন্তু এসবের আড়ালেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে আরও একটি বড়ো সমস্যা। তা হল প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution)। করোনা (COVID-19) প্রতিরোধ করতে গিয়ে ভয়াবহ প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। তেমনই জানাচ্ছে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান।
দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে আসার পরেও গোটা বিশ্বজুড়ে আজও অব্যাহত কোভিডের প্রকোপ। প্রতিদিনই নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। আর অক্লান্তভাবেই এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওষুধের পাশাপাশি রোগের বিরুদ্ধে লড়তে তাঁদের অন্যতম হাতিয়ার হল মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই কিট এবং ফেসশিল্ড। আর সুরক্ষামূলক এই সমস্ত সরঞ্জামই তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক থেকে। কেবলমাত্র একবার ব্যবহারের পরেই সেগুলি হয়ে উঠছে বর্জ্য।
কিন্তু যে হারে এই প্লাস্টিকজাত বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর, সেভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলি। যার ফলে, প্রক্রিয়াকরণ না করেই সেগুলি নিক্ষেপিত হচ্ছে সমুদ্রে। লাগামছাড়া এই প্লাস্টিক দূষণই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলছে পরিবেশকর্মীদের কপালে।
নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়েমিং পেং এবং পেইপেই ইয়ুর গবেষণায় উঠে আসছে, সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত সমুদ্রে মিশেছে ৮৪ লক্ষ টন কোভিডজাত বর্জ্য। এর মধ্যে রয়েছে শুধু ২৭ হাজার টন পিপিই কিট। সমুদ্রের বাস্ততন্ত্রের জন্য এই দূষণ ঠিক কতটা বিপজ্জনক তা নতুন করে বলার নেই কিছুই। পাশাপাশি সমুদ্র এবং নদীর স্রোতকেও ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করছে এই ধরনের একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য। রয়ে যাচ্ছে বিপরীত সংক্রমণের সম্ভাবনাও।
আরও পড়ুন
দূষণ কমাতে ‘গ্রিন ডেলিভারি’, উদ্যোগে বেঙ্গালুরুর পোস্ট অফিস
গবেষণায় উঠে আসছে সংশ্লিষ্ট বর্জ্যের ৮৭.৪ শতাংশই উৎপাদিত হয়েছে হাসপাতালে। অতিরিক্ত ১২.৬ শতাংশ বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। তালিকায় সবার প্রথমেই রয়েছে এশিয়া। কোভিডজাত দূষণের ৪৬ শতাংশের পিছনে রয়েছে শুধুমাত্র এশিয়া। ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে দূষণের পরিমাণ যথাক্রমে ২৪ ও ১৬ শতাংশ। কিন্তু এই দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায় কী? না, দেখতে গেলে বৈশ্বিক এই সংকটের সময়ে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকজাত এই বর্জ্যের উৎপাদন আটকানো এক কথায় অসম্ভব। তবে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থাপনার জোর দিয়েই কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রণে আনা যায় এই দূষণকে। তা একদিকে যেমন খরচসাপেক্ষ, তেমন স্বল্পসময়ে সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলাও সোনার পাথরবাটি। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলিও সেই উদ্যোগ নিতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়েও থেকে যাচ্ছে সন্দেহ। তবে এটুকু স্পষ্ট, সেই পথে না হাঁটলে আগামীদিনে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ…
আরও পড়ুন
অপরিণত শিশুমৃত্যুতে শীর্ষে কলকাতা, ঘাতক কয়লাজনিত দূষণ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রাস্তার মধ্যেই ধোঁয়া পরীক্ষা, দূষণ নিয়ন্ত্রণে পথে নামছে কলকাতা পুলিশ