সারাবছরই তাঁর পোস্টার, টি-শার্টের দেদার বিক্রি। আজ আবার তাঁর জন্মদিন। ক্লাবে ক্লাবে কাটা হচ্ছে কেকও। ভারতের প্রায় প্রতিটা শহরেই এমন দৃশ্য খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এমন দৃশ্যই দেখা যায় পৃথিবীর একেবারে বিপরীত প্রান্তে লিমা শহরে? তাহলে চমক লাগবে বৈকি!
হ্যাঁ, শুধু লিমা নয়, পেরুর প্রতিটা শহরেই শাহরুখ খান একজন সেলিব্রেটি। ভারতের থেকে সেখানে তাঁর ভক্তের সংখ্যা কম নয়। বরং ভারতীয় দর্শকদের কাছে আরও নানা নায়কের জনপ্রিয়তা থাকলেও, পেরুতে সেই জায়গাটা ধরে রেখেছেন শুধুই শাহরুখ। তিনিই সেখানে ভারতের সবচেয়ে বড়ো প্রতিনিধি।
পেরুতে সকাল হয়েছে ভারতের থেকে অনেকটাই পরে। পেরুর ঘড়িতে যখন রাত ১২টা, তখন ভারতের ফেসবুক টাইমলাইন ভেসে যাচ্ছে শাহরুখ খানের জন্মদিন সংক্রান্ত পোস্টে। কিন্তু এর মধ্যেই পেরুর অন্তত ৫০টি ফ্যান ক্লাব থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেয়েছেন কিং খান। কেকের উপরে আঁকা তাঁর ছবি। একটি ফ্যানক্লাব লিখেছে, “এবছর দূর থেকেই উষ্ণতা ভাগ করে নেওয়া হোক।” আর অন্য বছর? না, শাহরুখ নিজে কোনোদিন পেরুর মাটিতে পা দেননি। তবে প্রতি বছরই তাঁর জন্মদিনে পেরু থেকে ছুটে আসেন কেউ কেউ। এই তো ২০১৭ সালে, এক দম্পতি এসেছিলেন মুম্বাইতে। কিং খানের বাড়ির ঠিকানা পেতে বেশ সমস্যাতেই পড়তে হয়েছিল তাঁদের। আর তখনই অটোচালকদের মুখে মুখে খবর ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, শাহরুখ খানের জন্মদিনের উপহার কেনার জন্য তাঁরা ৩ বছর ধরে টাকা জমিয়েছেন। পেরুর নিজস্ব ঐতিহ্যশালী পুতুল তৈরি করেছেন নিজের হাতে। আর সঙ্গে এনেছেন ল্যাটিন আমেরিকার বিখ্যাত টুপি।
হিন্দি সিনেমার সঙ্গে অবশ্য পেরুর যোগাযোগ নতুন নয়। সেই ৭০-এর দশকে যখন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে নাম দিল পেরু, তখন থেকেই পেরুর মানুষ হিন্দি সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত। ‘হাতি মেরে সাথী’ বা ‘মাদার ইন্ডিয়া’-র মতো সিনেমা ছুঁয়ে গিয়েছিল সেখানকার মানুষের মনও। আসলে দুই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ঔপনিবেশিক ইতিহাস তো খুব আলাদা নয়। বলিউডের সিনেমার সঙ্গে প্রচার পেতে থাকে সিনেমার গানও। নব্বইয়ের দশকেই পেরুতে বেশ কিছু ডান্স ক্লাব তৈরি হয়, যারা নিজেদের বিজ্ঞাপনে জানায় বিশেষভাবে বলিউডের নাচ শেখানো হয়। তবে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতা একেবারে মুছে যায় ২০০৬ সাল নাগাদ। একদিকে বলিউড তখন আন্তর্জাতিক নীতি গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে ডিভিডি-র দৌলতে শুরু হয়েছে দেদার পাইরেসি। পাইরেসি নিয়ে যা বক্তব্যই থাক না কেন, আন্তর্জাতিক স্তরে শাহরুখ খানের আত্মপ্রকাশ এভাবেই। পেরুর মানুষ তখন একে একে দেখতে শুরু করলেন, ‘বাজিগর’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’। আর অবশ্যই সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্বদেশ’।
আরও পড়ুন
যুগলবন্দিতে পণ্ডিত যশরাজকে ডাকলেন ভীমসেন যোশী, বলিউডের গানেও মুগ্ধ তামাম শ্রোতা
আসলে শাহরুখ খানের মধ্যে একটা নতুন ব্যাপার ছিল। পেরুর মানুষ যেন নিজের জীবনের সঙ্গেই মিলিয়ে নিতে পেরেছিলেন তাঁদের নতুন নায়ককে। পারিবারিক সিনেমা, যৌথতার আহ্বান আছে। আবার তার সঙ্গেই আছে একধরনের অদম্য চরিত্র। সমাজের বিরুদ্ধে যাওয়া নয়, আবার সামাজিক নির্দেশকে মাথা পেতে মেনে নেওয়াও নয়। ঠিক এমন একটা চরিত্রই তো তৃতীয় বিশ্বের নায়ক হয়ে ওঠার যোগ্য। এরপর অবশ্য নানা সময় দেখা গিয়েছে, ভারতের থেকেও বিদেশেই বেশি জনপ্রিয় হয়েছে কিং খানের সিনেমা। ‘রাইস’ যেখানে ভারতের বক্স অফিসে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল, সেখানে বিদেশ থেকে তার আয় হয়েছে ৮৪.২৫ কোটি। আর ২০১৫ সালে ‘দিলওয়ালে’ ভারতের বাজারে আয় করেছিল ১৪৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদেশে আয় করেছে ১৭৫ কোটি টাকা। শুধুই পেরু নয়, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া সব দেশেই ছড়িয়ে আছে তাঁর ভক্তের দল। বলিউডে অনেক নতুন মুখ এলেও এখনও বলা যায় কিং খানই একমাত্র আন্তর্জাতিক মুখ।
তথ্যসূত্রঃ Fandom beyond Borders and Boundaries: Peru in Love with SRK, Petra Hirzer
Shah Rukh Khan fans celebrate his 55th birthday by donating 5,555 Covid kits, Jyoti Kanyal, India Today
Couple From Peru Saves For 3 Years To Bring Shah Rukh Khan A Birthday Gift!, Mid-Day
Why Shah Rukh Khan remains the ultimate NRI hero, Mint
অরিন্দম মুখোপাধ্যায়
আরও পড়ুন
ব্যর্থ দাম্পত্য তাঁকে দিয়েছে অবসাদ, ৩৯ বছরেই থেমেছিলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজিক হিরোইন’
Powered by Froala Editor