একহাতে জপমালা আর অন্যহাতে ভারতের জাতীয় পতাকা - প্রতিদিন নিয়ম করে আন্দোলনের মঞ্চে হাজির হতেন তিনি। বয়স ৮০ পেরিয়ে গিয়েছে, শরীর নুয়ে পড়েছে। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে সরে যাননি বিলকিস। শাহিনবাগ অবস্থানমঞ্চের প্রতিবাদীরা তাঁকে ডাকতেন ‘দাদি’ নামে, আর সারা দেশে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ‘দাবাং দাদি’ নামে। তবে তাঁর জনপ্রিয়তা শুধু ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই আর। সম্প্রতি ‘টাইম’ পত্রিকা প্রকাশিত ‘১০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েনসিয়াল পিপল’স লিস্ট – ২০২০’ তালিকায় দেখা গেল তাঁর নাম।
২০১৯ সালে কেন্দ্র সরকার প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রতিবাদের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল দিল্লি শহরের শাহিনবাগ ময়দান। আর সেখানে বহু ছাত্র-যুব’র মাঝে বিলকিসের নিয়মিত উপস্থিতি সবাইকে অবাক করেছিল। ৮২ বছরের বৃদ্ধা প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে উপস্থিত হতেন ময়দানে। প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত থাকতেন রোজ। পরেরদিন আবার ঠিক সময় দেখা যেত তাঁকে। ময়দানে ঘুরে ঘুরে বাকি তরুণ-তরুণীদের খোঁজ নিতেন। সন্তানের মতো আগলে রাখতেন তাঁদের। এই একনিষ্ঠতায় অবাক হয়েছে সারা বিশ্ব।
টাইম পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রের জন্য লড়াইতে কারাগারে যেতে হয়েছে যত তরুণ-তরুণীকে, মুখ বুজে পুলিশের উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে, তাদের সবার অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলেন বিলকিস। এই অনুপ্রেরণা সমস্ত পৃথিবীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আর এইভাবে সমাজের সমস্ত অংশের সার্বিক অংশগ্রহণের উপর একটা আন্দোলনের গড়ে ওঠা যেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকেই মনে করিয়ে দেয়।
টাইম পত্রিকার এই সম্মান বিলকিসের জীবনে কোনো পরিবর্তন না আনুক, নাগরিকত্ব আংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর সেই আন্দোলনের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে থাকবে এক ৮২ বছরের বৃদ্ধার নাম। তিনি ‘শাহিনবাগের দাদি’।
আরও পড়ুন
ধর্মের ভিতর থেকে গোঁড়ামির বিরোধিতা, শাহিনা জাভেদ এক অন্যস্বরের নাম
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
হাতিয়ার ব্যাঙ্গাত্মক ‘মিম’, প্রতিবাদের নতুন ভাষা চেনাল তরুণ প্রজন্ম