বিস্তীর্ণ খামারের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছে অসংখ্য সরু সরু খাল। কৃষিক্ষেত্র ও খামারে সেচের জন্যই এই ব্যবস্থা। কাছেই বয়ে চলেছে লোয়ার নদী। ফলে, সারাবছর জলের সরবরাহ নিয়ে চিন্তা নেই কোনো। বছর পাঁচেক আগে পর্যন্তও এভাবেই নির্ভাবনায় দিন কাটাচ্ছিলেন ফ্রান্সের (France) সিলান্সের কৃষকরা। তবে বিগত কয়েক বছর ধরেই ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছিল পরিস্থিতি। যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। বর্তমানে সম্পূর্ণ শুকিয়ে কাঠ ফ্রান্সের এই অঞ্চল।
হ্যাঁ, লোয়ার নদীর সঙ্গে সরাসরি যোগ থাকলেও বিন্দুমাত্র জল নেই দক্ষিণ ফ্রান্সে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খালগুলিতে। কারণ, বিগত দু’বছর ধরে অনাবৃষ্টিতে ভুগছে গোটা দক্ষিণ ফ্রান্স। সেইসঙ্গে চলতি বছরে ভয়াবহ খরা (Drought) থাবা বসিয়েছে গোটা ইউরোপজুড়ে। ফ্রান্সেও অন্যথা হয়নি তার। আর তার জেরেই প্রভাবিত কৃষিকাজ থেকে দৈনন্দিনের যাপন।
সাধারণত দক্ষিণ ফ্রান্সের এই অঞ্চলগুলিতে চাষ হয় টমেটো, গোলমরিচ, তরমুজ, আনারসের মতো ফল। তবে জলাভাব দেখা দেওয়ায় তরমুজ, আনারসের চাষ বন্ধ হয়েছে। সামান্য জমিতে পৃথক করে শাকসবজির ফলন করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাও বেশ খরচ-সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের জন্য। কারণ, জলাভাব। বৈদ্যুতিক পাম্প লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে অনেকের কাছেই। হ্যাঁ, শুধু সেচই নয়, শুকিয়ে এসেছে ভূগর্ভস্থ জল। ফলে, কৃষির জন্যও জল কিনতে হচ্ছে তাঁদের। আড়াইশো গ্যালন জলের দাম এখন সেখানে ২০ ইউরো। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় দেড় হাজার টাকা। স্থানীয়দের ভাষায় জলই এখন সোনা সেখানে।
এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে বলেই আশঙ্কা স্থানীয়দের। তবে এখানেই শেষ নয় সমস্যার। জলাভাব দেখা দিয়েছে লোকালয়েও। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য সাধারণ নদী ও কুয়ার জলই পরিস্রুত করে ব্যবহার করতেন স্থানীয়রা। খরার জেরে বন্ধ হয়েছে সেই রাস্তাও। গত মে মাস থেকে বাধ্য হয়ে সিলান্সের রেশনে যোগ করা হয়েছে পানীয় ও ব্যবহারিক জল। মাথা পিছু ১৫০ লিটার করে জল প্রদান করছে ফ্রান্সের প্রশাসন। রান্না, জামা-কাপড় কাচা, স্নান— সবকিছু তাতেই।
আরও পড়ুন
খরার বিরুদ্ধে লড়াই ‘ওয়াটার চ্যাম্পিয়ন’ নীতার
অবশ্য বৃষ্টি যে একাবারেই নেই, এমনটা নয়। স্বাভাবিকের থেকে বৃষ্টির মাত্রা ৮০ শতাংশ কমলেও, চলতি বছরে বেশ কয়েকবার আকাশ ভেঙেছে ফ্রান্সে। এমনকি বৃষ্টির জন্য সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছিল সেখানকার বেশ কিছু মেট্রোস্টেশনও। তবে তাতে হাল ফেরেনি পরিস্থিতির। ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং ইউরোপজুড়ে দাবানলের প্রভাবে তাপদাহের কারণে জল শোষণের ক্ষমতা হারাচ্ছে সেখানকার মাটি। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আনছে ফরাসি ইকোলকিক্যাল ট্রানজিশন দপ্তরের গবেষণা। তবে শুধু ফ্রান্সই নয়, একই সমস্যার সম্মুখীন ইতালি এবং জার্মানিও। রোন, রাইন কিংবা পো নদীর চেহারাও বর্তমানে একইরকম। জলবায়ু পরিবর্তনের এই রোষ থেকে মুক্তি পাওয়ার স্থায়ী সমাধান এখনও অজানা গোটা ইউরোপের কাছে…
আরও পড়ুন
ভয়াবহ খরার শিকার সোমালিয়া, প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা ৩ লক্ষাধিক শিশুর!
Powered by Froala Editor