ভয়াবহ দূষণের শিকার গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহ, জানাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষা

করোনা আবহে অনেকটা কমেছিল গঙ্গার দূষণ। দিল্লি, এলাহাবাদ, বারাণসী-সহ উত্তর ভারতের একাধিক শহরে গঙ্গার জলের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উঠে এসেছিল কমেছে দূষকের মাত্রা। কিন্তু উত্তর ভারতে দূষণ কমলেও, বাংলার দক্ষিণাংশে স্বাস্থ্য ফেরেনি গঙ্গার (Ganga Pollution)। বরং, সাম্প্রতিক সময়ে লাগামহীন দূষণের শিকার দক্ষিণবঙ্গের গঙ্গাকেন্দ্রিক বাস্তুতন্ত্র।

সম্প্রতি গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহ তথা হুগলি নদীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের রিপোর্ট প্রকাশ করলেন কলকাতা ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চের (Kolkata IISER) গবেষকরা। মূলত, কল্যাণী থেকে শুরু করে মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার প্রবাহের জলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাই ছিল তাঁদের মূল উদ্দেশ্য। তবে আজ নয়, গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল বছর তিনেক আগে। দীর্ঘ তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবেই প্রতি মরশুমে একাধিকবার পৃথক পৃথকভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জলের। সেইসঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বোটে করে গঙ্গা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট বাস্তুতন্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেছেন কলকাতার গবেষকরা। 

কল্যাণী থেকে শুরু করে মোহনার আগে পর্যন্ত গঙ্গার দু’পাশে রয়েছে ত্রিবেণী, হালিশহর, চন্দননগর, নৈহাটি, পলতা, ব্যারাকপুর, দক্ষিণেশ্বরের মতো অঞ্চল। যেগুলি শিল্পাঞ্চল হওয়ার পাশাপাশি ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকাও বটে। ফলে, দ্বিমুখী দূষণের শিকার হচ্ছে গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহ। একদিকে যেমন কলকারখানার দূষিত বর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে গঙ্গাবক্ষে, তেমনই ভাবেই সাধারণ মানুষের আবর্জনাও মিশছে গঙ্গায়। রাসায়নিক দূষকের পাশাপাশি গঙ্গার জলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতিই এখন চিন্তার ভাঁজ ফেলছে গবেষকদের কপালে। এমনকি বড়ো আকারের প্লাস্টিকেও গঙ্গার প্রবাহ প্রভাবিত হচ্ছে, এমন তথ্যই উঠে আসছে গবেষণায়। প্লাস্টিকজাত দূষণ অনেকাংশে গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে গঙ্গার দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিকভাবে নিম্নমুখী বিরল গাঙ্গেয় ডলফিন-সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছেদের অস্তিত্বও। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যও। সব মিলিয়ে পরিবেশের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিপর্যয়কেও যেন ডেকে আনছে এই ভয়াবহ গঙ্গা দূষণ।

১৯৮৬ সালে প্রথম গঙ্গার স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান ১’-খ্যাত সেই প্রকল্পের পর আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বছর সাতেক আগে ২০১৪ সালে নীতি আয়োগের সময় ঘোষণা হয়েছিল ‘নমামি গঙ্গা’ প্রকল্পের কথাও। কিন্তু বাস্তবে এই সমস্ত প্রকল্পই গঙ্গার দক্ষিণ প্রবাহের দূষণ ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট কার্যকর নয় বলেই জানাচ্ছেন কলকাতার গবেষকরা। দক্ষিণবঙ্গের গঙ্গাদূষণ ঠেকাতে রাজ্য সরকারকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন গবেষণাপত্রটির মূল লেখক ও গবেষক পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি। কলকাতা আইআইএসইআরের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছে বিশেষ রূপরেখাও। বিশেষ ধরনের শৈবাল ও অণুজীবের উপস্থিতি বাড়িয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণই এখন একমাত্র উপায় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু আদৌ কি এই নীল-নকশা অনুসরণ করবে সরকার? করলে কতটাই বা কার্যকর হবে সেই প্রকল্প? উত্তর জানা নেই…

আরও পড়ুন
প্লাস্টিক দূষণ রোধ থেকে বৃক্ষরোপণ— হাজির রোবট

তথ্যসূত্রঃ
Ganga’s lower stretches are in ‘poor’ or ‘very poor’ health across all seasons, shows a new study, Anwesha Ghosh, Scroll.in

আরও পড়ুন
কোভিডের কারণে লাফিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিক দূষণ, শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
দূষণ কমাতে ‘গ্রিন ডেলিভারি’, উদ্যোগে বেঙ্গালুরুর পোস্ট অফিস

Latest News See More