ভয়ঙ্কর বন্যার কবলে উত্তরবঙ্গ, গৃহহীন কয়েক লক্ষ মানুষ

প্রায় প্রতি বছর বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে থাকেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। আর এবারে সেই পরিচিত বন্যা পরিস্থিতি যেন সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ১১ জুন দেশে বর্ষার অনুপ্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই খারাপ হতে থাকে পরিস্থিতি। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত বন্যার কবলে আটটি জেলা। আশ্রয়হীন কয়েক লক্ষ মানুষ।

জুন মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই উত্তর দিনাজপুর জেলার মহানন্দা, কুলিক ও টাঙ্গন নদীতে জলস্তর বাড়তে থাকে। অবশ্য প্রশাসন প্রথম থেকেই প্রস্তুত ছিল। তাই অবিলম্বে সবাইকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারপর একটা মাস পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। বরং লাগাতার বৃষ্টির জেরে বন্যার পরিধি ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে।

জুলাই মাসের আগেই দুই দিনাজপুর থেকে জল নামতে শুরু করে মালদা জেলায়। পাশাপাশি লাগাতার বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার জেলাতেও। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান করার কারণেই দ্রুত বন্যার কবলে চলে গিয়েছে প্রতিটি জেলা। বর্ষায় জল বাড়তে শুরু করেছে তিস্তা এবং তোর্সা নদীতেও।

ইতিমধ্যে গত সপ্তাহের শেষ থেকে আবার জলীয় বাষ্প টানতে শুরু করেছে মৌসুমী অক্ষরেখা। ফলে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই সোমবার রাতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয় তোর্সা তীরবর্তী অঞ্চলে। যার জেরে বিপদে পড়েছেন কোচবিহার জেলার ফাসিরহাট এবং কেশবাশ্রমের বাসিন্দারা। নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে ২০টির বেশি বাড়ি। অবশ্য মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। প্রত্যেককেই প্রাথমিকভাবে বাঁধের উপর সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্গত মানুষদের জন্য খুলে দেওয়া হয় স্থানীয় স্কুলবাড়ি। তবে প্রশাসন সূত্রে খবর, সরকারের পাঠানো ত্রাণ সামগ্রীও ইতিমধ্যে প্রায় শেষের দিকে। তার উপর ত্রাণ শিবিরে বহু মানুষ একসঙ্গে থাকায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণের সম্ভবনাও। অথচ আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে এখনই পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সংকেত নেই। বরং লাগাতার বৃষ্টির জেরে ধস নামতে পারে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার পাহাড়ি এলাকায়, এমনটাই জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

আরও পড়ুন
অসমে বন্যার হাত থেকে কয়েকশো মানুষকে বাঁচিয়েছে বাঁশের তৈরি বাড়িই

একদিকে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে বিপর্যস্ত সারা পৃথিবী, অন্যদিকে প্রকৃতি যেন সব দিক দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে শুরু করেছে। এই সংকটের হাত থেকে মুক্তির দিন গুনছেন উত্তরবঙ্গের কয়েক লক্ষ বিপর্যস্ত মানুষ। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, এর উত্তর একমাত্র প্রকৃতিই জানে।

আরও পড়ুন
বন্যায় বিপর্যস্ত অসম, কাজিরাঙায় মৃত ৬টি বিরল একশৃঙ্গ গণ্ডার

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রবল বন্যার কবলে উত্তরবঙ্গ; লাল সতর্কতা জারি হল ৫টি জেলায়

More From Author See More