কথায় বলে, দুর্ভাগ্য যখন আসে একা আসে না। ২০২০ সালের ভারতবর্ষের দিকে তাকালে সেই কথা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়। বছরের শুরু থেকেই অর্থনৈতিক মন্দার মুখে পড়েছিল দেশ। আর তার মধ্যেই এসে গেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এবং লকডাউন। অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ল। মহামারীর দোসর হয়ে এল অনাহার। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতিক বন্যা প্রমাণ করে, প্রকৃতি যেন এক বিধ্বংসী মানসিকতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশের উপর।
বর্ষায় বন্যা এদেশে প্রায় প্রতি বছরের ঘটনা। কিন্তু ২০২০ সালে তার যে ভয়াবহ রূপ দেখা গিয়েছে, এমন সর্বগ্রাসী চেহারা স্মরণযোগ্য সময়ে কখনো নিয়েছে বলে মনে পড়ে না। জুন মাস থেকেই বন্যার প্রকোপ শুরু হয় আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলিতে। কেবলমাত্র আসামেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে ৫টি জেলার যাবতীয় ফসল। আর গৃহহীন মানুষ যখন আশ্রয় নিয়েছেন রিলিফ ক্যাম্পে, তখন আরেক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে। এভাবে তো শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। ফলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে।
তবে শুধু আসাম বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেখতে দেখতে বন্যা ছড়িয়ে পড়ে ভার, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডেও। এমনকি দেশের রাজধানী দিল্লিতেও বন্যার কবলে পড়ে একাধিক অঞ্চল। এভাবে জুলাই মাসের শেষ দিক থেকেই বন্যার প্রকোপ উত্তরের আজ্যগুলি থেকে ক্রমশ দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে মহারাষ্ট্র এবং তারপর কেরালা ও কর্ণাটকও অতিবর্ষণের মুখে। গতবছরেই কেরালা এবং কর্ণাটকের বন্যা পরিস্থিতি ভয়ানক চেহারা নিয়েছিল। এবছর এখনও তেমন পরিস্থিতি তৈরি না হলেও বৃষ্টি থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিশষ করে মুম্বাইতে তিনদিনে ২০০ সে.মি.র বেশি বৃষ্টিপাতের ঘটনা ইতিপূর্বে কখনও ঘটেছে বলে মনে করতে পারছেন না আবহাওয়া দপ্তরের বিশেষজ্ঞরাও।
ইতিমধ্যে ভারতের নানা অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। গতমাসের শেষেই ইউনিসেফ এই বিষয়ে প্রত্যেককে সচেতন হওয়ার কথা জানিয়েছিল। ইউনিসেফের বক্তব্যে আরও প্রকাশ পায়, দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শিশুরাই। পাশাপাশি বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলিত করোনা সংক্রমণের বিষয়টি নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। আর এর মধ্যে পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়ে উঠেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য। ইতিমধ্যে অন্তত ৮৭০ জন মানুষ বন্যার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। গৃহহীন মানুষের সংখ্যাও লক্ষাধিক। অথচ আগস্টের প্রায় শেষে এসেও বর্ষার বিদায় নেওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শেষ কোথায়? জানেন না কেউই।
Powered by Froala Editor