তথ্যগোপনের অভিযোগে বিদ্ধ ‘কোভিডমুক্ত দেশ’ তুর্কমেনিস্তান

২০১৯ সালের শেষ দিক সেটা। চিনের উহান শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এক মারণ ভাইরাস। ফ্লু-এর উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। চিনের গণ্ডি পেরিয়ে সেই ভাইরাস থাবা বসিয়েছে গোটা বিশ্বে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৩ কোটি। অথচ, এর পরেও মারণ ভাইরাসের থেকে সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত (COVID Free Countries) বিশ্বের ৫টি দেশ। যার মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হল তুর্কমেনিস্তান (Turkmenistan)। এবার মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশের বিরুদ্ধেই উঠল তথ্যগোপনের অভিযোগ।

হ্যাঁ, জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় তুর্কমেনিস্তান সরকারের পক্ষে জমা দেওয়া নথি অনুযায়ী আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। সম্প্রতি, এমনটাই দাবি করলেন প্রবাসী তুর্কমেন সাংবাদিকরা। অভিযোগ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্যই পরিকল্পনামাফিক এই পদক্ষেপ নিয়েছে তুর্কমেন সরকার। কিন্তু আদৌ কি তার প্রমাণ রয়েছে কোনো?

প্রমাণের প্রসঙ্গে নয় পরে আসা যাবে। তার আগে কয়েকটি বিষয়ে একটু নজর দিলেই সন্দেহ দানা বাঁধতে বাধ্য। প্রথমত, তুর্কমেনিস্তানের অবস্থান। যে ৫টি রাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত কোভিডমুক্ত, তার মধ্যে ৩টিই দ্বীপরাষ্ট্র। ফলে এ-কথা স্পষ্ট, বাইরের পরিবেশের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকায় করোনাভাইরাস থাবা বসাতে পারেনি এই দেশগুলিতে। কিন্তু তুর্কমেনিস্তানের সেই ভৌগোলিক সুবিধা নেই। পাশাপাশি ইরানের মতো দেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ায় কোভিড সংক্রমণের সম্ভাবনা কখনোই শূন্য হতে পারে না প্রাক্তন সোভিয়েত অঙ্গরাজ্যের। কেননা, কোভিডের প্রথম তরঙ্গের সময় থেকেই ইরান ছিল এশিয়ার অন্যতম করোনাভাইরাস হটস্পট।

এখানেই শেষ নয়। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর র্যা চেন ড্যানবার জানাচ্ছেন, গত বছর জুন মাস থেকেই অজানা এক ফ্লু ছড়িয়েছিল তুর্কমেনিস্তানে। যার প্রভাবে দেখা দিয়েছিল শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ। মারা গিয়েছিলেন কিছু মানুষও। তবে সবটাই ‘লাং ডিজিজ’-এর তকমা দিয়ে ধামাচাপা দিয়ে দেয় তুর্কমেন সরকার। কিন্তু জুন মাসের গরমে ‘ফ্লু’ হওয়ার সম্ভাবনাকে গোড়াতেই নস্যাৎ করে দিচ্ছেন র্যা চেল।

আরও পড়ুন
কোভিডে প্রয়াত বিশিষ্ট অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তী

সম্প্রতি, তাঁর এই গবেষণাকে সমর্থন জানিয়েছে আরও এক প্রবাসী তুর্কমেন সাংবাদিক মিয়াটেভ। তিনি ৬০ জনেরও বেশি এই ‘অজানা রোগ’-এ মৃত ব্যক্তির তথ্য প্রকাশ করেছেন তাঁর প্রতিবেদনে। যা আরও জোরালো করে তুলছে কোভিডের তথ্যগোপনের দাবিকে।

আরও পড়ুন
চেনা ওষুধের অচেনা প্রয়োগেই আটকাবে কোভিড, আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে বাঙালিরাও

যদিও এত কিছুর পরেও তুর্কমেন সরকারের দাবি, রাজনৈতিক বিভাজন তৈরির জন্যই এই ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু অভিযোগ যদি সত্যি হয়েও থাকে তবে একটা গোটা দেশের তথ্য কীভাবে লোপাট করা সম্ভব হল সরকারের পক্ষে? 

আরও পড়ুন
ভারতেই তৈরি বিশ্বের প্রথম ডিএনএ কোভিড ভ্যাকসিন, অনুমোদন দিল কেন্দ্র

হিসেবটা খুব সহজ। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে বাসিন্দার সংখ্যা মাত্র ৬০ লক্ষ। ফলত, সেখানে মৃতের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। বিগত দেড় বছরে মৃত্যুর হার ভারত কিংবা জাপানের মতো হলেও, সংখ্যাটা মেরে কেটে দাঁড়াবে হাজার থেকে দেড় হাজার। যা ভুয়ো কারণ দেখিয়ে মুছে ফেলা কঠিন নয় একেবারেই। উল্লেখ্য, শুধু তুর্কমেনিস্তান নয়, কিছুদিন আগে এই একই অভিযোগ উঠেছিল আরেক কোভিডমুক্ত রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধেও। তবে কিম-সরকারের বাধা টপকে সে-দেশের আসল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি কারোর পক্ষেই…

Powered by Froala Editor

Latest News See More