“নিছক একটা ফেসবুক গ্রুপ হয়ে থাকতে চাইনি আমরা। বরং চেয়েছিলাম, উত্তমকুমার এবং স্বর্ণযুগের অন্যান্য শিল্পীদের নিয়ে একটা সিরিয়াস চর্চা হোক। আর গ্রুপের কয়েকজন মিলে একটু বাইরে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছিলই। তাই হঠাৎ ঠিক করলাম, ঘুরতে যদি যাওয়া হয় তাহলে উত্তম কুমারের সিনেমাগুলোর শুটিং স্পটেই যাওয়া যাক।” বলছিলেন কল্লোল অস্থির চক্রবর্তী। গত ১০ বছর ধরে তিনি সামাজিক মাধ্যমে উত্তমকুমারকে নিয়ে মননশীল চর্চা করে চলেছেন।
উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর ৪০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। অথচ তাঁকে নিয়ে বাঙালির নস্টালজিয়ায় এখনও ভাঁটা পড়েনি। সামাজিক মাধ্যমে লেখালিখি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পত্রিকায় উত্তমকুমারকে নিয়ে নিয়মিত বা অনিয়মিত চর্চা চলছেই। তবে এসবের পাশাপাশি সদলবলে তাঁর সিনেমার শুটিং স্পটগুলিতে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা সত্যিই অভিনব। ২০১৮ সালে কল্লোল অস্থির চক্রবর্তী, অরিজিৎ ভট্টাচার্য এবং সৌরীশ দাস মিলে তৈরি করেন ‘উত্তমকুমার ও স্বর্ণযুগ’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপ। সেই গ্রুপের পক্ষ থেকেই ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম ঘুরতে যাওয়া হয় হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুরের গোয়ালপোতা গ্রাম। ‘হার মানা হার’, ‘রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত’, ‘অসাধারণ’ সহ উত্তমকুমারের একাধিক সিনেমার শুটিং হয়েছে এই গ্রামে। আর তার নেপথ্যে ছিলেন প্রযোজক সত্যনারায়ণ খাঁ। তাঁরই জন্মভিটে এই গ্রামে। তবে গোয়ালপোতা গ্রামকে সবচেয়ে সুন্দরভাবে চেনা গিয়েছে ‘ধন্যি মেয়ে’ সিনেমাতে। সেবারের যাত্রার নামও রাখা হয়েছিল ‘ধন্যি মেয়ে ট্যুর’। এখানে সত্যনারায়ণ খাঁ-এর বাড়িটিই ছিল ছবিতে উত্তমকুমারের বাড়ি। এছাড়া সেই খেলার মাঠ, চায়ের দোকানের ধ্বংসাবশেষ, সেই বটগাছ – সবই দেখে এসেছেন গ্রুপের সদস্যরা।
আরও পড়ুন
প্রমথেশ বড়ুয়াই প্রকৃত ‘দেবদাস’, অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন উত্তমকুমার
আরও পড়ুন
‘সৌমিত্র নয়, আমার আসল প্রতিদ্বন্দ্বী কালী বন্দ্যোপাধ্যায়’, বলেছিলেন উত্তমকুমার
আরও পড়ুন
প্রস্তাব ফেরালেন উত্তমকুমার, সেই চরিত্র লুফে নিয়েই বাজিমাত সৌমিত্রের
পরে করোনা অতিমারীর কারণে দীর্ঘদিন ঘুরতে যাওয়া বন্ধ রাখতে হয়েছে। এর মধ্যে আবার শুরু হয়ে গিয়েছে উদ্যোগ। আগামী ২ জানুয়ারি তাঁরা রওয়ানা হবেন সুন্দরবনের উদ্দেশে। সেখানে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখবেন ‘অমানুষ’ সিনেমার শুটিং-এর জায়গাগুলি। প্রথমবারের ভ্রমণের দায়িত্বে ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্র চক্রবর্তী এবং চন্দন কুমার চট্টোপাধ্যায়। এবারের যাত্রা তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছেন কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিজিৎ ভট্টাচার্য এবং পরিতোষ মাহাতো। সঙ্গে লঞ্চে নদীপথে ভ্রমণ এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার পরিকল্পনা তো রয়েছেই। তার অনেকটাই ধরা পড়েছে ‘অমানুষ’ সিনেমাটিতে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেও গিয়েছে নানা দৃশ্য। বাঙালির তো পায়ের তলায় সরষে। আর শীতকাল এলেই মন বেরিয়ে পড়তে চায় কোনো নিরালা পথ ধরে। কল্লোলবাবু বলছিলেন, “আমরা যাঁরা উত্তমকুমারকে ভালোবাসি, তাঁদের কাছে ঘুরতে যাওয়ার জন্য এই জায়গাগুলোর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?” তাই সুদূর উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা হয়েও তিনি বারবার ছুটে আসেন কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে। আর সেইসঙ্গে আরও অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান জায়গাগুলির কথা। তাঁদের দেখাদেখি যদি আরও অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করেন, তাহলেই খুশি হবেন কল্লোলবাবুরা।
Powered by Froala Editor