২০৫০ সালের মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে কলকাতা-মুম্বাই, জানাচ্ছে গবেষণা

বর্তমান পৃথিবীতে নিঃশব্দ ঘাতক হয়ে দাঁড়িয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন। একদিকে যেমন বৃষ্টিরেখা বদলের জন্য খরার প্রকোপ বাড়ছে মানচিত্রজুড়ে, তেমনই ভারত, চিন, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বন্যায় বিধ্বস্ত হচ্ছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তবে এখানেই শেষ নয়। আরও বড়ো বিপদ অপেক্ষা করে আছে আগামীতে। এবার সে ব্যাপারেই সতর্ক করল নিউ জার্সি’র ক্লাইমেট সেন্ট্রাল। এই সংস্থার প্রকাশিত সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, সমুদ্রের জলতল বাড়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যেই সম্পূর্ণ জলের তলায় তলিয়ে যেতে পারে বিশ্বের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহর।

আর্কটিক অঞ্চল তো বটেই, বিগত কয়েক বছরে অস্বাভাবিক হারেই বরফ গলছে গ্রিনল্যান্ডের। সম্পূর্ণভাবে মুছে গেছে একাধিক হিমবাহের অস্তিত্ব। আর তার ফলেই ক্রমশ দ্রুত গতিতে বাড়ছে সমুদ্রের জলতল। কিন্তু এর দরুন পৃথিবীর মানচিত্রে কোন কোন অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হবে— সে ব্যাপারে সর্বপ্রথম বিস্তারিত তথ্য দিল ক্লাইমেট সেন্ট্রালের সাম্প্রতিক গবেষণা।

মূলত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সিমুলেশনের মাধ্যমেই সাম্প্রতিক এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে মার্কিন সংস্থাটি। বেশ কয়েক বছরের চেষ্টায় ক্লাইমেট সেন্ট্রালের গবেষকরা ‘কোস্টাল রিস্ক স্ক্রিনিং টুল’ নামক বিশেষ এআই সফটওয়্যারটি তৈরি করেন। এই সফটওয়্যার সিমুলেশনের মাধ্যমেই ধরা পড়েছে জলতল বৃদ্ধির কারণে পৃথিবীর পরিবর্তিত মানচিত্র। 

গবেষকরা জানাচ্ছেন, ৫০ সেন্টিমিটার জলতল বৃদ্ধি হলেই পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র-তীরবর্তী শহরগুলি প্লাবিত হবে। এমনকি বিস্তীর্ণ অঞ্চল সর্বক্ষণ জলমগ্ন হয়ে পড়ার কারণে আর বসবাসযোগ্যও থাকবে না মানুষের জন্য। ২০৫০ সালের মধ্যে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে এই পরিস্থিতি। আর সেখান থেকে বাদ থাকছে না ভারতও। 

আরও পড়ুন
সাইকেলে খারদুংলা জয়, পরিবেশ বাঁচাতে বার্তা পুরুলিয়ার অক্ষয়ের

পশ্চিমের গুজরাট থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, গোয়া, কেরল, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সমুদ্র এগিয়ে আসতে পারে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। সম্পূর্ণভাবে জলের তলায় তলিয়ে যাবে ভারতের বাণিজ্যনগরী মুম্বাইয়ের ৬৫ শতাংশ অঞ্চল। তবে জলতল বৃদ্ধির জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলা। প্লাবিত হবে দীঘা, মন্দারমনি, কোন্টাই, তমলুক, জয়নগর ইত্যাদি অঞ্চল। একেবারে সমুদ্র উপকূলবর্তী না হলেও গাঙ্গেয় উপত্যকার দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ার রেহাই পাবে না কলকাতাও। স্থায়ীভাবে জলে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে বরানগর, সোনারপুর রাজপুরের মতো অঞ্চলগুলি। সেইসঙ্গে বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপও বাড়বে ফি বছর। 

আরও পড়ুন
পরিবেশ বাঁচাতে লৌহখনির লিজ রুখে যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের

একমাত্র কার্বন নির্গমনের হার কমানোর মাধ্যমেই বিশ্ব উষ্ণায়ন নামক এই প্রাকৃতিক দানবের আরও খানিকটা সময় কিনে নেওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। সতর্কতা আছে, আছে বিজ্ঞানের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীও। কিন্তু আদৌ পরিবেশের ভারসাম্য ফেরাতে কতটা উদ্যোগী বিশ্বের ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রগুলির প্রশাসন? উত্তর, জানা নেই…

আরও পড়ুন
রাতারাতি উজাড় সহস্রাধিক গাছ, আরাবল্লী-কাণ্ডে সরব পরিবেশকর্মীরা

Powered by Froala Editor

Latest News See More