সমুদ্র গিলছে সবই, মানচিত্র থেকে বিলুপ্তির পথে ওড়িশার ৭টি গ্রাম

দুবছর আগেও দৃশ্যটা এমন ছিল না। এখন সত্যিই এক পাণ্ডববর্জিত এলাকা। নগ্ন বালিয়াড়ির বুকে কোথাও বেরিয়ে আছে একটা নলকূপের হাতল। কোথাও কিছু ঘরবাড়ির স্মৃতিচিহ্ন। একটি মন্দিরও আছে। তবে তাতে কোনো বিগ্রহ নেই। গোটা চরজুড়ে এখন মাত্র ৩০টি পরিবারের বাস। এভাবেই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া জেলার সতভায়া। একসময় যে জনপদ তৈরি হয়েছিল ৭টি গ্রাম নিয়ে। দুবছর আগেও যেখানে ৭০০ পরিবারের বাস ছিল। আজ ওড়িশার মানচিত্র থেকে বিদায় নিতে চলেছে সেই গ্রাম।

অনেকের ভিটেমাটি আগেই নিয়ে গিয়েছে সমুদ্র। অনেকের প্রাণও নিয়েছে। চাষের জমি অনাবাদী হয়ে উঠেছে। বেশ কিছু বছর ধরেই সতভায়া গ্রামের অবস্থা কঠিন হয়ে উঠেছিল। সমুদ্রের উপকূলে ভাঙন রোধ করা তো সহজ নয়। তাই শেষ পর্যন্ত সেখানকার মানুষদেরই ভিটেমাটি ছেড়ে বিদায় নিতে হল। তবে সেই প্রক্রিয়াও খুব সহজে এগোয়নি। ২০০৪ সালে ওড়িশা সরকার সতভায়ার বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ কলোনি তৈরির উদ্যোগ নেয়। সেই বাগাপোতিয়া কলোনি তৈরির কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। তবে সরকারি অর্থে যে বাড়ি তৈরি হয়, তার আয়তনও পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য খুব প্রশস্ত নয়। বিশেষ করে গ্রামের মুক্ত প্রকৃতির মধ্যে যাঁদের বাস ছিল, তাঁদের পক্ষে এই পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়া কঠিন।

কেউ কেউ সরকারি কলোনি ছেড়ে ফিরে এসেছেন স্বেচ্ছায়। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সব আশা তাঁরা বিসর্জন দিয়েছেন। কারোর ছেলেমেয়ে কলোনিতে থেকে গেলেও নিজেরা শেষ জীবন গ্রামের বুকে কাটাতে ফিরে এসেছেন। অবশ্য ফিরে এসে জীবন যে আরও কঠিন। সামান্য রেশনের সামগ্রী আনতেও ৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে, একটা খাল পেরিয়ে তবে পৌঁছতে হয় পাশের গ্রামে। আবার গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চেয়েও পারছেন না কেউ কেউ। ২০১৮ সালে শেষ যখন গ্রামবাসীদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়, তখনও ৩০টি পরিবার বাকি থেকে যায়। এই ৩ বছরে আর তাঁদের খোঁজ নিতে আসেননি কেউ। কোনোদিন পুনর্বাসন পাবেন কি? জানেন না তাঁরা। 

সরকারি হিসাব বলছে, ১৯৯০ সাল থেকে একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের ফলেই দুর্বল হয়ে পড়েছে ওড়িশার উপকূল অঞ্চল। ৫৫০ কিলোমিটার উপকূলের ২৮ শতাংশই যেকোনো মুহূর্তে সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে যেতে পারে। উপকূল ঘেঁষে থাকা প্রতিটা গ্রামের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেইসব যতদিন না হচ্ছে, প্রকৃতির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে একাই লড়াই করতে হবে।

আরও পড়ুন
দাবদাহে বিপর্যস্ত বাদুড়রা, রক্ষাকর্তার ভূমিকায় ওড়িশার ‘ব্যাট ম্যান’

Powered by Froala Editor