দুর্ঘটনা ঘটে ৩৬ বছর আগে। তার প্রভাব থেকে গিয়েছে আজও। ১৯৮৪ সালে ইউনিয়ন কার্বাইড ফ্যাক্টরি থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাস দুহাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। গ্যাসের প্রভাব পড়েছিল পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষের শরীরে। আর সেই কুপ্রভাব আজও শরীরে বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে অনেককে। করোনা সংক্রমণের ফলে সাম্প্রতিক কিছু মৃত্যুর ঘটনাই চোখে আঙুল দিয়ে আবারও মনে পড়িয়ে দিল সেই দুর্ঘটনা।
গত ৫ এপ্রিল ভূপাল শহরে মারা যান ৫০ বছরের এক প্রৌঢ়। এর ঠিক তিনদিন পর মারা যান ভারত হেভি ইলেকট্রিক কারখানার এক প্রাক্তন কর্মচারী। এঁরা দুজনেই ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। এরপর আরো পাঁচজন ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানা যায়, যাঁরা প্রত্যেকেই ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার শিকার ছিলেন। প্রত্যেকের শরীরেই বাসা বেঁধেছিল করোনা ভাইরাস। আপাত দৃষ্টিতে এটা কাকতালীয় মনে হলেও, ৩৬ বছর আগের দুর্ঘটনার প্রভাবেই যে আজ এই অবস্থা, সে-কথা মেনে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে এসেই প্রত্যেকের ফুসফুস, কিডনি এবং হৃৎপিণ্ডের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছিল। আর ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের দুর্বলতায় আক্রান্ত মানুষের শরীরেই সহজে বাসা বাঁধে করোনা ভাইরাস। ফলে সাতটি মৃত্যুর পিছনেই আছে এক দীর্ঘ ইতিহাস।
দেশজুড়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠলে, কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারকে একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছিল। তাতে তাঁরা দাবি করেছিলেন, ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার সার্ভাইবারদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। মহামারীর মধ্যে যে-কোনো সুস্থ মানুষের চেয়ে তাঁদের শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা পাঁচগুণ বেশি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এখনও এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে তাঁদের আশঙ্কা যে যুক্তিযুক্ত ছিল, সেকথা এই মৃত্যুর খবর থেকেই বোঝা যায়। এবার কি কোনো ব্যবস্থা নেবে সরকার? এই প্রশ্নই তুলছেন অনেকে।