একটু ভালোবাসার স্পর্শ, জীবনের শেষ মুহূর্তে এটুকুই তো তাঁদের একমাত্র সম্বল। সেটুকুও কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। জীবন নাকি জীবনের আবেগ আর অনুভূতি? এই দ্বন্দ্বের মধ্যেই আটকে গিয়েছেন প্রবীণ নাগরিকরা। আর বৃদ্ধাবাসে যাঁরা থাকেন, তাঁদের অবস্থা তো আরও কষ্টকর। প্রিয়জনদের চোখের দেখাও বহুদিন অন্তর অন্তর। আবার তখনও একটু উষ্ণতার ছোঁয়া উপভোগের সম্ভবনা নেই। তাঁরাও তো চাইবেন না, বাড়ির প্রবীণরা অসুস্থ হয়ে পড়ুক। আর এই ভাইরাসের আক্রমণ যে তাঁদের শরীরেই তাড়াতাড়ি ঘটছে।
এর মধ্যেই কেটে গিয়েছে মাদার্স ডে। লকডাউনের অন্যান্য দিনের মতোই সেদিনও একইরকম নিস্তব্ধ ছিল ব্রাজিলের রিও গ্রান্দে শহরের এই বৃদ্ধাবাসটি। তবে আবাসিকদের মন অন্যদিনের থেকে একটু বেশিই খারাপ ছিল। আসলে এইদিন অন্তত ছেলেমেয়েদের কাছে পেতে চেয়েছিলেন তাঁরা। আর ২৮ জন আবাসিকের শুকনো মুখ দেখে তাই আবাসিকের কর্তৃপক্ষের মনও ভিজে উঠেছিল। অতএব সেই শুকনো মুখ জন্ম দিল নতুন এক আবিষ্কারের। এই করোনা পরিস্থিতিতেও যে আবিষ্কার প্রিয়জনদের সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছে বৃদ্ধাবাসের আবাসিকদের।
‘হাগ টানেলে’র বিষয়টা আসলে খুবই সহজ। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেখানে দুটি শরীরের মাঝে ব্যবধান তৈরি করবে প্লাস্টিকের পাতলা চাদর। এর ফলে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভয় নেই। রিও গ্রান্দের এই বৃদ্ধাবাসে আবাসিকদের এবং আবাসিকদের দেখতে আসা প্রিয়জনরা যাতে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরতে পারেন, তাই এই পাতলা চাদরের ব্যবস্থাই করা হয়েছে। পর্দার মতো সেই চাদরের মধ্যেই আছে দুদিক থেকে জড়িয়ে ধরার জন্য হাত রাখার জায়গা। এমনকি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি শিশু এবং হুইল-চেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তিদের জন্য হাত রাখার আরও দুটি জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এর ফলে পুরোপুরি না হলেও, প্রিয়জনদের কাছে পাওয়ার আনন্দ অনেকটাই উপভোগ করছেন আবাসিকরা।
১৭ মার্চ থেকে ব্রাজিলে শুরু হয়েছে লকডাউন। অথচ মাত্র কয়েক সপ্তাহেই এতদিনের না পাওয়ার যন্ত্রণা অনেকটাই ভুলতে পেরেছেন আবাসিকরা। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ আবাসিক তাঁদের পরিবারের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় অনেকেই এখনো প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত। তবে খুব তাড়াতাড়ি সেইসব আবাসিকদের মুখেও হাসি ফোটাতে পারবেন বলে আশাবাদী আবাসিক কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন
ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ১০ লক্ষ, এক দিনে ৫৪ হাজার নতুন সংক্রমণ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
সমুদ্রতটে একের পর এক কবর, সরকারের করোনা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ব্রাজিলে