একসময় গ্রামবাংলায় লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াত একটি প্রবাদ। কলকাতা শহরে নাকি বাঘের দুধও পাওয়া যায়! কিন্তু সত্যিই কি তাই? সেটা জানা যায় না। তবে বাংলার অন্যান্য অংশের তুলনায় ইংরেজ আমলে এই কলকাতারই উন্নতি হচ্ছিল দ্রুত। সেই সঙ্গে হাজির হচ্ছিল দেশ বিদেশের বণিকরা। সেই ‘শ্রীবৃদ্ধি’র খবরই লোকের মুখে মুখে ফিরত। শহরে পাওয়াও যেত বিভিন্ন বিচিত্র জিনিস। আশ্চর্যের হলেও, এখানেই একসময় বিক্রি হয়েছিল বাঘ! সেই সময়ের একটি বিজ্ঞাপন থেকে অন্তত সেরকমটাই খবর পাওয়া যায়।
সেই আমলে কলকাতার আশেপাশে বাঘের আনাগোনা কিন্তু কম ছিল না। সমাচার দর্পণের মতো পত্রিকাতেও লেখা হয়েছিল চিৎপুরের বাঘ-ভীতির কথা। এমনকি, উনবিংশ শতকেও শহরের বুকে কান পাতলে পাওয়া যেত বাঘ বেরনোর খবর। যেমন, ১৮১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শোনা গেল একটি বাঘ সুন্দরবন পেরিয়ে এখানে ঢুকেছে। বাগমারি, বেলগাছিয়া অঞ্চলেও সে চলে এসেছিল; একজন মহিলাকে মেরেও ফেলেছিল। পরে দমদমে যাওয়ার পর সেখানকার স্থানীয় একজনের বুদ্ধিমত্তায় ধরা পড়ে বাঘটি। পরে মেরে ফেলা হয় বাঘটিকে। তারও ৩০ বছর পর, ১৮৪৯ সালে সংবাদ প্রভাকরেও একটি খবর বেরিয়েছিল। খোদ উত্তর কলকাতার বুকে এই বাঘের হাতে দুজন শিশু মারা যায়। তখনকার প্রশাসনের ব্যর্থতার কথাও ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। উল্লেখ্য, এই ‘বাঘ’টি কিন্তু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নয়, নেকড়ে বাঘ!
আবার শুরুর প্রসঙ্গে ফেরা যাক। ১৭৯৯ সালের এই বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, লালবাজারের ২৩০ নং দোকানের মিঃ স্মিথের দোকানে নাকি একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রয়েছে চার মাস বয়সী দুটি ব্যাঘ্রশাবক ও একটি চিতাবাঘও। যারা দেখতে চান বা কিনতে চান, তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। দেখার জন্য অবশ্য আট আনা করে টাকাও ধার্য করা হয়েছিল। সেই বাঘ বিক্রি হয়েছিল কিনা, কে কিনেছিল, সেই সব তথ্য আর জানা যায় না। তবে বাঘের দুধ না পাওয়া গেলেও, খোদ কলকাতাতেই যে দোকানে বাঘ বিক্রি হত, এই খবর সত্যিই আশ্চর্যের। তাই না!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
২০১৮ সালে ভারতেই ঘটেছে বৃহত্তম বাঘসুমারি, স্বীকৃতি দিল গিনেস বুক