যেভাবে উপার্জনের ভার নিজেদের কাঁধে টেনে নিলেন বাঁকুড়ার আদিবাসী মহিলারা

দিন চলে যায় দিনমজুরিতে। তাতেও ঠিক উপার্জন নেই ঠিকঠাক। শ্রমের থেকে খিদের দাম অনেক বেশি। বাড়িতে সন্ধ্যায় ঠিকঠাক আলো আসে না, পর্যাপ্ত খিদেটুকু মেটানোর জন্য যোগান থাকে না খাবারেরও। নিজেদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারে না, জ্বর-ব্যাধি হলে গ্রামীণ হাসপাতালের নড়বড়ে বেঞ্চিতেই ইহলীলা সাঙ্গ হয়।

কিন্তু এই অসহায়তা আর কতদিন? এই মুখ বুজে দরিদ্রের ফ্যান-ভাতে আর কতকাল কাটবে? এই অন্ধকার যুগের অবসান দরকার, এই জীবনযাত্রার বদলের প্রয়োজন। কিন্তু বদল ঘটাবে কারা? বাইরে থেকে হাজারো প্রতিশ্রুতি আসে আর যায়। তাই নিজেদেরই জীবনযাত্রার মান বদলাতে হবে, আর বদলাতে গেলে লড়তে হবে, শিখতে হবে, পড়তে হবে, বুঝতে হবে।

এটাই ছিল তাঁদের মূলমন্ত্র। আর সেই মন্ত্র আঁকড়েই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের বেলারমারী গ্রামের সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র মহিলারা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে তাঁরা গঠন করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী। আর তাঁদের এই লড়াইয়ে অন্যতম কারিগর হিসাবে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বাঁকুড়া জেলার শময়িতা মঠের অন্তর্ভুক্ত অন্যতম সমাজসেবক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল।

সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে ও তাড়নায় বেলারমারী গ্রামের আদিবাসী মহিলারা দলবদ্ধভাবে তৈরি করেছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী, সরকারের সহায়তায়। তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি সপ্তাহে সেই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে ব্যাঙ্কে ১০ টাকা করে প্রথম জমা করেন, পরবর্তীকালে ব্যাঙ্ক তাঁদের সেই টাকার ওপর লোন দেয়। এবং সেই লোন থেকে তাঁরা শালপাতা দিয়ে থালা তৈরি করার মেশিন কেনেন, পাশ্ববর্তী জঙ্গল থেকে শালপাতা তুলে নিয়ে এসে সেই মেশিনে থালা তৈরি করেন। থালাগুলি বাজারজাত করার ফলে, লভ্যাংশের টাকায় একদিক দিয়ে যেমন তাঁদের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, তেমনই শোধ হয়েছে ব্যাঙ্কের লোনও। আর তাঁদের এই সম্পূর্ণ কর্মপদ্ধতিকে পরিচালনার জন্য উৎসাহ যোগাচ্ছেন সমাজসেবক ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল।

যে মহিলারা একসময় দুমুঠো পেটভরে খাবার জোটাতে পারতেন না, আজ তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে স্বনির্ভর হয়ে সেই চিরাচরিত যন্ত্রণার অবসান ঘটাচ্ছেন। পাশাপাশি বাড়ছে শিক্ষার হারও। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে বাড়ছে সামাজিক বিভিন্ন সুযোগ, ব্যাঙ্কিং সিস্টেম সম্পর্কেও জানতে পারছেন তাঁরা। সত্যিই এ এক অন্যরকম জীবনসংগ্রাম, এক হার না-মানা বিপ্লব।

More From Author See More