একটি ভাঙাচোড়া সেতুর উপর দাঁড়িয়ে আছেন এক বিপন্ন মানুষ। সারা শরীর জুড়ে যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। দুহাতে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে সেই যন্ত্রণাই প্রকাশ করছেন। আর তার শরিক হয়ে পিছনের আকাশও যেন ভেঙে পড়েছে। এতক্ষণে নিশ্চই বুঝতে পারছেন, এডওয়ার্ড মুঙ্কের ‘দ্য স্ক্রিম’ ছবিটির কথা বলা হচ্ছে। কালক্রমে যে ছবি হয়ে উঠেছে অস্তিত্ব সঙ্কটের মূর্ত প্রতীক। কিন্তু এর মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে দানা বেঁধেছে একটি রহস্য। ছবির বামদিকের উপরের কোণে লেখা একটি বাক্য। তবে সম্প্রতি সেই রহস্যের সমাধান করলেন শিল্প বিশেষজ্ঞরা।
‘দ্য স্ক্রিম’ ছবির চারটি মূল নমুনার একটির কোণে নরওয়ের ভাষায় লেখা এই বাক্যটির অর্থ, ‘একমাত্র পাগলেই এমন ছবি আঁকতে পারে।’ কিন্তু কে লিখেছেন এই বাক্যটি? প্রায় এক শতাব্দী ধরে সেই রহস্যেরই অনুসন্ধান করে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশিরভাগ সমালোচকই মনে করেন, ১৮৯৫ সালে প্রথম প্রদর্শনীর সময়েই কোনো দর্শক হয়তো লিখেছিলেন বাক্যটি। তবে সম্প্রতি নরওয়ে ন্যাশানাল মিউজিয়ামের বিশেষজ্ঞরা ইনফ্রারেড প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দেখিয়েছেন, এই লেখার হস্তাক্ষর আসলে শিল্পীর নিজেরই। আর এই তথ্য থেকেই ছবিটির অর্থ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।
ছোটো থেকেই পরিবারের একাধিক সদস্যের অকালমৃত্যু দেখেছেন নরওয়ের শিল্পী মঙ্ক। আর প্রতিটি মৃত্যুই তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সেইসব যন্ত্রণাকেই তিনি প্রকাশ করতেন নিজের শিল্পের মাধ্যমে। আর তাই তাঁর ছবির বিষয়বস্তু জুড়ে থাকে অন্ধকার। তবে শেষ পর্যন্ত শিল্পের মধ্যেও যেন আশ্রয় পেলেন না তিনি। অবসাদ বাড়তে বাড়তে একসময় চরম আকার নিল। ১৯০৮ সালে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হলেন এডওয়ার্ড মুঙ্ক। তবে শিল্পী নিজে হয়তো সেই ইঙ্গিত পাচ্ছিলেন অনেক আগে থেকেই। আর তাই ১৮৯৫ সালে আঁকা ছবিতে পেন্সিলের অস্পষ্ট অক্ষরে লিখলেন ওই বাক্যটি। অবশ্য ছবিটি দেখলে বোঝা যায়, কতটা মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এমন তুলির টান সৃষ্টি করা যায়। নতুন এই আবিষ্কার শিল্পের ইতিহাসকে নতুন করে বুঝতে শেখাচ্ছে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
কেন ‘আত্মহত্যা’ করেছিলেন ভ্যান গঘ? নতুন অসুস্থতার খোঁজ পেলেন গবেষকরা