স্বাধীনতা দিবসের দিন এক দেশের প্রেসিডেন্ট সমস্ত নাগরিককে উদ্দেশ্য করে জানালেন, সেদিন তিনি প্রত্যেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাবেন। এমনটা হঠাৎ অসম্ভব মনে হতে পারে। কিন্তু যে দেশের জনসংখ্যা মাত্র হাফ ডজন, সেখানে এমনটা ঘটতেই পারে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চই? ঠিক এমনটাই দৃশ্য ইংল্যান্ডের কাছে সিল্যান্ড। একটি মাত্র পরিবারকে নিয়েই গড়ে উঠেছে একটি সার্বভৌম দেশ। আর সেই দেশে আছেন একজন রাজাও। এখনও অবধি এটাকেই পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম দেশ হিসাবে ধরা হয়।
সিল্যান্ড যেন এই পৃথিবীর বুকে এক জ্বলন্ত বিস্ময়। স্বাধীনতার আকর্ষণ মানুষকে কতটা আগ্রাসী করে তুলতে পারে, তাই যেন ইতিহাসের পরতে পরতে জানিয়ে দিয়ে যায় সিল্যান্ড। ১৯৬৭ সালের কথা। তখন ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনীর মেজর প্যাডি রয় বেটস এই সমুদ্র উপকূলে এসে বাস করতে শুরু করেন। আর এই দিগন্তপ্রসারী সমুদ্রের বুকে তিনি কোথায় যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর আর ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ তাঁর সহ্য হয়নি।
ঠিক এভাবেই জন্ম নিল সিল্যান্ড। অবশ্য প্রথমে ছিল কেবল একটি রেডিও স্টেশন। যে রেডিও স্টেশন ক্রমাগত প্রেম আর ভালোবাসার বাণী প্রচার করতে থাকে। সাম্রাজ্যবাদের নিগড়ে আবদ্ধ ইংল্যান্ড সেই বার্তা মেনে নিতে পারেনি। আর ঠিক সেই সময়ে শুরু হল রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সংঘাত। কিন্তু সামরিক শক্তি দিয়েও রেডিও স্টেশনের বার্তা বন্ধ করা যায়নি। বরং ১৯৬৯ সালের ক্রিসমাস ডে থেকে যেন প্রায় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে সিল্যান্ড।
রয় বেটসের পরিবারকে রীতিমতো ডাকাতের তকমা দিতেও দ্বিধা করেননি ইংল্যান্ড সরকার। আর ঠিক এই কারণেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছেন তিনি। প্রথমে অবশ্য এই ছোট্ট দেশটিকে কেউ পাত্তা দেয়নি। কিন্তু ১৯৯৩ সাল থেকে এটিকেই বিশ্বের ক্ষুদ্রতম সার্বভৌম দেশ হিসাবে মনে করা হয়। সেইসঙ্গে এই দেশের জন্য আছে নিজস্ব পাসপোর্ট এবং প্রশাসনিক নিয়ম। আর আছে দিগন্তবিস্তৃত নীল সমুদ্র প্রান্তর।
রয় বেটসের মৃত্যু ঘটেছে আজ বেশ কিছুদিন। এখন দেশের শাসন ক্ষমতায় আছেন তাঁর ছেলে প্রিন্স মিশেল। সিংহাসনে বসেও নিজেকে যুবরাজ বলেই উল্লেখ করেন তিনি। কারণ এখনও পিতাকেই রাজত্বের শাসক হিসাবে ভাবতে ভালো লাগে তাঁর। বাস্তবে ঠিক কোনো মানুষ নয়, সিল্যান্ডকে শাসন করছে একটি ধারণা। যে ধারণা রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে মুক্তির হদিশ দেয়। যে ধারণা এক অসীম স্বাধীনতার গল্প শোনায়। ঠিক উপকূল থেকে তাকিয়ে দেখা বিস্তৃত সমুদ্রের মতো।
Powered by Froala Editor