যে-কোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানুষ বদলে ফেলতে পারে তার অভ্যাস। ঠিক যেমন এই লকডাউনের মধ্যে বদলাচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন জীবন। শুধু মানুষেরই নয়, বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে পশুপাখিদের জীবনও। বিশেষ করে নাগরিক জীবনের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা পশুপাখিদের চরিত্রে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অনেকেই ফিরে যাচ্ছে তাদের পুরনো জীবনযাত্রায়।
সাম্প্রতিক কিছু পর্যবেক্ষণে এমনই বিভিন্ন পরিবর্তনের ছবি ধরা পড়েছে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ইতালির সীগাল পাখির কথা। জিনগতভাবে এই পাখিটি মাংসাশী এবং শিকারি প্রজাতির হলেও ক্রমশ নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছিল রোম শহরের নাগরিক পরিবেশের সঙ্গে। কেবল মাঝেমধ্যে ব্যস্ত পথচারীর হাত থেকে খাবার কেড়ে খাওয়া ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অভিযোগ সেভাবে ছিল না। হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের ফেলে দেওয়া খাবারের উপরেই নির্ভর করত তাদের জীবনযাত্রা। তবে ৯ মার্চ থেকে দুমাসের উপর সময় ধরে চলতে থাকা লকডাউনের ফলে সমস্ত হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে রোমের হলদে পায়ের সীগাল পাখির মধ্যে যথেষ্ট খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। আর এর ফলেই তারা আবার ক্রমশ শিকারি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
এখনও অবধি মূলত পায়রা ও বিভিন্ন শ্রেণীর পাখি সীগালের শিকারে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া টাইবার নদীর বিভিন্ন মাছ এবং রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ইঁদুর শিকার করতেও দেখা গিয়েছে এই পাখিকে। মূলত ইতালির অনুন্নত নিকাশি ব্যবস্থার টানেই ভিড় জমিয়েছিল সীগাল। দীর্ঘদিন ধরে অপরিচ্ছন্ন রোম শহরকে আবর্জনামুক্ত রেখেছে এই পাখি। এখনও লকডাউনের মধ্যে রোমের রাস্তায় এবং টাইবার নদীতে সমস্ত অবাঞ্ছিত জীবের বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সীগাল।
তবে আশঙ্কার কারণও যথেষ্ট আছে। লকডাউন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই নিশ্চই এই শিকারি জীবন ছেড়ে নাগরিক জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না এই প্রজাতি। সেক্ষেত্রে কোনো মানুষ যে তাদের আক্রমণের শিকার হবে না, এমন কথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। লকডাউনের ফলে বিভিন্ন পশুপাখির অবাধ এবং নিরুপদ্রব জীবনযাত্রার যে ছবি আমাদের মুগ্ধ করছে, তার মধ্যেই প্রচ্ছন্নভাবে লুকিয়ে আছে এই আশঙ্কাও। এখন মানুষ ও প্রকৃতির দ্বন্দ্বের কী পরিণতি হয়, আপাতত নজর থাকবে সেদিকেই।