আমাজনের জঙ্গলের থেকেও ১৫ গুণ বেশি কার্বন শোষণ করতে পারে সামান্য সমুদ্র-শৈবাল। পসিডোনিয়া নামের এই সমুদ্র-শৈবালকে ঘিরে গবেষকদের উৎসাহের শেষ নেই। কিন্তু গবেষণা দূরস্থান, আর কতদিন এই শৈবালের অস্তিত্ব থাকবে তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিগত এক দশক ধরে একের পর এক সমীক্ষা দেখাচ্ছে, ভূমধ্যসাগরে পসিডোনিয়ার পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পাচ্ছে। ইতিমধ্যে স্পেন সরকার থেকে বেশ কিছু সংরক্ষণ উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে আদৌ পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে কি? আর এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই বা কতদিন লাগবে? এমনই সব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে বিজ্ঞানী মহলে।
অতি প্রাচীন সামুদ্রিক উদ্ভিদ প্রজাতি পসিডোনিয়া। ভূমধ্যসাগরের সর্বত্রই পাওয়া যায় এই উদ্ভিদ। তবে মালোর্কা থেকে ফরমেন্টেরা দ্বীপ পর্যন্ত এলাকাতেই পসিডোনিয়ার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। আর এই অঞ্চল জুড়ে পর্যটকদের ভিড় বিপদ ডেকে আনছে সামুদ্রিক উদ্ভিদের। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৮ সালে স্প্যানিস বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণাপত্র দাবি করে, একটি ইয়াচের নোঙর ফেলার ফলে যে ক্ষতি হয় পসিডোনিয়ার বাস্তুতন্ত্রে, তা থেকে সুস্থ অবস্থায় ফিরতে অন্তত হাজার বছর সময় লেগে যায়। তাই পসিডোনিয়াকে বাঁচাতে গেলে পর্যটকদের উপর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি।
ফুলের পরাগযোগের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও পসিডোনিয়ার মূল প্রজনন প্রক্রিয়া হল বিভাজন। অর্থাৎ যে পদ্ধতিতে ইস্টের মতো এককোষী প্রাণী বংশবিস্তার করে। আর এই প্রক্রিয়ার উপর স্বাভাবিকভাবেই নানা মেকানিক্যাল শক্তির প্রভাব থেকে যায়। তবে পসিডোনিয়ার ভবিষ্যতের সামনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হল উষ্ণায়ন। কারণ ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের থেকে বেশি উষ্ণতায় এই উদ্ভিদ বাঁচে না। অথচ ক্রমশ সমুদ্রের জলের উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভূমধ্যসাগর থেকে এই প্রজাতিটি হারিয়ে যেতে বেশি সময় লাগবে না।
পসিডোনিয়া বিলুপ্ত হয়ে গেলে পরিবেশ দূষণের সঙ্গে লড়াই করা অনেকটাই কঠিন হয়ে উঠবে। ২০০৮ সালের একটি গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছিল, সমস্ত আমাজন অরণ্যভূমি যতটা কার্বন শোষণ করতে পারে, ভূমধ্যসাগরের স্বল্প পরিসরের পসিডোনিয়া স্তর তার থেকে ৪৪ শতাংশ বেশি কার্বন শোষণ করে। তবে এই প্রজাতিকে বাঁচানোর কোনো রাস্তাই কি নেই? না, তেমনটা মনে করছেন না বিজ্ঞানীরা। বরং তাঁদের দাবি, উদ্ভিদটি নিজেই বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি করে নিতে পারবে। সমুদ্রে ভাসমান কার্বনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে পারলেই উষ্ণতাও কমবে। তবে তার জন্য আরও বেশি করে পসিডোনিয়া লাগাতে হবে। তার স্বাভাবিক প্রজনন হারকেও বাড়াতে হবে। হয়তো খুব দ্রুত সাফল্য আসবে না। তবে এত বড়ো সমস্যার সমাধানের জন্য কিছুটা ধৈর্য তো ধরতেই হবে। তবে স্পেন সরকার এই কাজে কতটা খরচ করবে, সে-দিকেই তাকিয়ে আছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন
মেরু-পরিবর্তনের কারণেই বিলুপ্ত বহু প্রজাতি, জানাচ্ছে গবেষণা
Powered by Froala Editor